ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসকরা যান না যথাসময়ে, রোগী হয়ে হাসপাতালে গেলে লাশ হয়ে ফিরতে হয়, রোগীরা চরম দুর্ভোগে

আপডেট : November, 5, 2016, 2:46 am

জাবেদ হোসাইন মামুন->>>

ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, আন্ত:কোন্দল, অপরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধময় পরিবেশে রোগীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। রোগী হয়ে হাসপাতালে গেলে লাশ হয়ে ফিরতে হয়, না হয়, সামান্য অজুহাতে ও উন্নত চিকিৎসার নামে ঢাকা চট্রগ্রাম রেফার করা হয়। ছাত্র জীবনে মানব সেবার লক্ষ্য নিয়ে একজন মানুষ চিকিৎসক হয়ে ক্রমেই যেন কসাইতে পরিণত হয়। সেবার কথা ভুলে গিয়ে নিজের আখের গোছাতে মরিয়া হয়ে উঠে। তেমনি পরিস্থিতি দেখা গেছে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের বেলায়।
ফেনীর ১৬ লাখ নয়, বৃহত্তর নোয়াখালী, রামগড়, মীরসরাই সহ এতদঞ্চলের লোকদের জন্য নির্মিত ২৫০ শয্যার ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতাল। এখানে ২৫ জন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে ১৯ জনেরই পদ শূন্য। কনসালটেন্ট ১৮টি পদের মধ্যে ৬টি পদ শূন্য। নার্স ৮৭ পদের মধ্যে ৩০টি পদই শূন্য রয়েছে।
বহির্বিভাগ ও আন্ত:ভিবাগে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী সেবা নিতে এসে পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে।
হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চালু রাখার জন্য ফেনী সিভিল সার্জনের অফিস আদেশে বিভিন্ন উপজেলা থেকে ১০ জনকে সংযুক্তি দেয়া হলেও চারজন ট্রেনিংয়ে চলে গেছেন। যে কজন বর্তমানে হাসপাতালে সংযুক্ত রয়েছেন, তাঁরাও যথাসময়ে নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না। কনসালটেন্টরা যার যার ইচ্ছামতো হাসপাতালে আসেন আর যান। ফলে ডাক্তার দেখাতে না পেরে দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মাসের পর মাস এসব অনিয়ম চললেও দেখার কেউ নেই।
সদর থানার বালুয়া চৌমুহানীর আজিজুল হক জানান, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আবিদা সুলতানাকে ফেনী সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগে নেয়া হয়। কিন্তু জুনিয়র কনসালটেন্ট তাহিরা খাতুন রোজী তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে তাঁর প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন এবং সেখানে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করে মোটা অঙ্কের টাকা নেন।
এ ব্যাপারে আজিজুল হক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি তাঁর অভিযোগে জানান, ডা. তাহিরা খাতুন রোজী একইভাবে প্রতিদিন এভাবে হাসপাতাল থেকে তাঁর প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী ‘ভাগিয়ে’ নিচ্ছেন।
ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. অসীম কুমার সাহা জানান, তিনি অভিযোগটি পেয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য চিকিৎসকরাও বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চেম্বার করেন এবং হাসপাতালে রোগী না পাঠিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগীদের চিকিৎসা করান এবং এই টেস্ট সেই টেস্টের নামে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা।
হাসপাতালের দায়িত্বশীল সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, বিভিন্ন উপজেলা থেকে ফেনী সদর হাসপাতালে সংযুক্তি নিয়ে ডা. গোলাম মোস্তফা, ডা. সাজ্জাদ ও ডা. রাজীব বিশ্বাস যথাসময়ে হাসপাতালে আসেন না।
সূত্র আরো জানায়, ফেনী সদর হাসপাতাল থেকে হবিগঞ্জ উপজেলায় বদলি হয়েছেন চিকিৎসক গোলাম মাওলা। কিন্তু তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ আদেশ ২২ মাস গোপন করে ফেনী সদর হাসপাতাল থেকে বেতন-ভাতা নিচ্ছিলেন। সম্প্রতি মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে বিষয়টি ধরা পড়ে। ফেনী সদর হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. সারওয়ার জাহান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। একইভাবে ডা. আজিজ উল্লাহর বদলির আদেশ প্রায় দুই মাস হাসপাতালের ফাইল থেকে গায়েব করে ফেলা হয়। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন আরএমও ডা. অসীম কুমার সাহা।
হাসপাতালে চিকিৎসকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অপেশাদারসুলভ সম্পর্ক রয়েছে। এটিও হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ার কারণ বলে সচেতন মহল দাবি করেন।
ফেনী ছাড়া কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নোয়াখালীর বসুরহাট, সেবারহাট, চট্টগ্রামের মীরসরাই, খাগড়াছড়ির রামগড় এলাকার মানুষ এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। রোগী হাসপাতালে গেলে বা কোন স্বজন স্বজন নিয়ে গেলে বুঝা যাবে মানুষের কষ্ট কাকে বলে। অথচ এসব বোকা জনগণের টেক্সের টাকায় রাষ্ট্র চলে, সরকার চলে এবং চিকিৎসকদের বেতন চলে। দিন দিন যেন মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা আর মমত্ববোধ হারিয়ে যাচ্ছ।
চিকিৎসকদের যথাসময়ে উপস্থিত থেকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় লোকজন। একই অবস্থা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলোতেও চলছে। এব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায় এলাকাবাসী।