প্রাণ সংশয়ে মোদি কেঁদে কেঁদে বললেন, ওরা আমাকে বাঁচতে দিবেনা

আপডেট : November, 14, 2016, 5:03 am

জাবেদ হোসাইন মামুন->>>
ভারতে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল নিয়ে অকল্পনীয় জনদুর্ভোগ ও বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার প্রাণসংশয় হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন। তবে জানালেন, সব পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে তিনি প্রস্তুত। জীবন্ত পুড়িয়ে মারলেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই তিনি থামাবেন না। খবর এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
রোববার পিএমও-র টুইটার হ্যান্ডেলে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, ‘আমি জানি অনেক শক্তি আমার বিরুদ্ধে ময়দানে নেমে পড়েছে, তারা হয়তো আমাকে বাঁচতে দেবে না, তারা হয়তো আমাকে ধ্বংস করে দেবে, কারণ ৭০ বছর ধরে তারা যে লুট চালাচ্ছিল, তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমি প্রস্তুত।’ প্রধানমন্ত্রীর এ টুইট বার্তায় আভাস, তিনি বিভিন্নভাবে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা করছেন।
শুধু টুইটারেই নয়, রোববার এক ভাষণেও মোদি বলেন, তাকে খুন করা হলেও তিনি পিছু হঠবেন না। গোয়ার মোপায় রোববার একটি বিমানবন্দরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোদি এ কথা বলেন। তার কথায়, ‘কেউ যদি আমাকে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেয়ার চেষ্টাও করে, তা হলেও আমি থামবো না।’
এ সময় মোদি আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন। তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য জনগণ তাকে ভোট দিয়েছে। তিনি দেশের জন্য পরিবার ত্যাগ করেছেন।
৯ নভেম্বর দেশের আর্থিক হাল ফেরাতে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন মোদি। মোদি সরকারের তরফে বার বার জানানো হচ্ছে, জাল টাকা এবং কালো টাকার রমরমা রুখতে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট রাতারাতি বাতিল করে দেয়ার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত জরুরি ছিল। কিন্তু বিরোধী দলগুলো জনসাধারণের হয়রানির কথা তুলে ধরে পথে নেমেছে। সরকার উপযুক্ত প্রস্তুতি না নিয়ে কেন এ পদক্ষেপ করল, বিরোধীদের তরফে সেই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। সেই সমালোচনা নস্যাৎ করতে রোববার অত্যন্ত আক্রমণাÍক মনোভাব নিয়েই মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে ব্ল–মবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯ থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ভারতের ব্যাংকগুলোতে ৫০০ ও ১০০০ রুপির প্রায় ২ লাখ কোটি রুপি (২৯৮০ কোটি ডলার) জমা পড়েছে। গোয়ায় মোদি বলেন, কালো টাকার সমস্যা দূর করতে নোট বদলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। দেশের আর্থিক প্রেক্ষাপটকে উপরের দিকে তুলে আনতে বেনামি সম্পত্তির দিকে কড়া নজর রাখতে চলেছে কেন্দ্র। বিরোধীদের দাবি, বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের একাংশের পকেটেই রয়েছে কালো টাকা। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাউকেই রেয়াত করা হবে না। কালো টাকায় মহীরুহ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদেরও রাখা হবে সরকারের আতশ কাচের নিচে।’
প্রধামন্ত্রী আরও জানান, গত দশ মাস ধরে খুব গোপনে একটি ছোট্ট ‘টিম’ তৈরি করে নোট বদল প্রক্রিয়ার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করা হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটির গোপনীয়তা ভীষণ জরুরি ছিল। নয়তো রাঘববোয়ালরা আঁচ পেয়েই কালো টাকা সরানোর কাজে লেগে পড়ত। এখনও যদি কেউ সেই চেষ্টা চালায়, তবে তারা মহা মুশকিলে পড়বেন বলে হুশিয়ারি মোদির।
জাপান সফরে থাকাকালীন বিরোধী খোঁচায় জেরবার ছিল বিজেপি শিবির। রব উঠেছিল, যে সময় দেশের মানুষ নোট বদল করতে গিয়ে নাকানি-চোবানি খাচ্ছে, অর্থ-সংকটে নাজেহাল দেশের মানুষ, তখন মোদি দেশের বাইরে। ক্ষমতায় আসার আগে বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে আনবেন বলে দাবি জানালেও, সবই ছিল মোদির ভাঁওতা এমন টিপ্পনিও ছিল অনেকের গলায়। বিদেশ থেকে ফিরেই প্রত্যয়ী মোদি বলেন, ‘দেশে কালো টাকা ফিরবে। আর সেজন্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে এরই মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন। বিদেশে টাকা পাচার হলে তার খবর তৎক্ষণাৎ চলে আসবে। যাতে দেশে আর্থিক অবস্থা অনেক বেশি চাঙা হবে।’
নোট বদল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ৫০ দিন ধার্য করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার পরেই সারা দেশের আর্থ-সামাজিক চিত্রটার আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে দাবি নরেন্দ্র মোদির। তার ভাষায়, ‘দেশের হাল ফেরাতে ডোজ বাড়াচ্ছি।’ তবে সাধারণ মানুষের যে অসুবিধা হচ্ছে, এটা মেনে নেন প্রধানমন্ত্রী এবং বলেন, অসুবিধা মেনে নিয়েই মানুষ এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে। সবাই বলছেন, এতে দেশের ভালো হবে।
দেশের সব সৎ নাগরিককে এ অভিযানে তার সরকারের সঙ্গে থাকার আবেদনও জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। বিজেপির শীর্ষ নেতাদের মতে, এখন মোদিকে একাধারে দুটি কাজ করতে হচ্ছে। এক, দ্রুত আমজনতার ভোগান্তি দূর করে নোটের জোগান স্বাভাবিক করা, তাদের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা। দুই, যেভাবে সংসদের অধিবেশনের মুখে বিরোধীরা একজোট হচ্ছে, সেটির মোকাবেলা করা। বিজেপির দাবি, যে সব দল মুখে দুর্নীতি দমনের কথা বলে এখন বিরোধিতা করছে, তারা আসলে নিজেদের কালো টাকা নিয়ে চিন্তিত।