২০২১ সালের মধ্যে মানুষকে শতভাগ বিদ্যুত দেয়া হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আপডেট : December, 7, 2016, 7:10 pm

জাবেদ হোসাইন মমামুন->>> প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ী হবার জন্য জনগণকে আহবান জানিয়ে বলেছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের চলমান গতি অব্যাহত রাখার মাধ্যমে আমাদের রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী আগামী ২০২১ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুত দিতে পারব। তিনি বাসাবাড়িসহ সর্বত্র অহেতুক বিদ্যুৎ ও গ্যাস অপচয় না করার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন যেমন ব্যয়বহুল তেমনি সময়সাপেক্ষ। তাই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ী হবার জন্য আমি সবাইকে অনুরোধ জানাব। তিনি বলেন, আমি চাই অভিভাবক শিক্ষক থেকে শুরু করে সকলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়,অফিস,আদালত-সর্বক্ষেত্রেই আপনারা সাশ্রয়ী মনোভাব নিন অর্থাৎ বিদ্যুতের সুইচটা একটু নিজেরাই অফ করেন। আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও ঘর থেকে বের হবার সময় নিজ হাতেই বিদ্যুতের সুইচটা বন্ধ করে দেই। কাজেই আমি চাই প্রত্যেকের মাঝেই এই মানসিকতাটা থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে ‘জাতীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ-২০১৬’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের চলমান গতি অব্যাহত রাখার মাধ্যমে আমাদের রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী আগামী ২০২১ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পারব। তিনি বলেন, এ কাজের অংশ হিসেবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ২৪,০০০ মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০,০০০ মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ খাতের ক্রমাগত উন্নয়নের মাধ্যমে গত আট বছরে ৮০টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৫,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে মোট সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ৯,৮৯৩ সার্কিট কিলোমিটার এবং বিতরণ লাইনের পরিমাণ ৩ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার। বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণেও আমরা ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎপাদিত বিদ্যুৎ সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্নভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য বিগত আট বছরে ১,৯০২ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং ৯৭,০০০ কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, নেপালের জ্বালানি মন্ত্রী জনার্দন শর্মা এবং জাতীয় সংসদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম এমপি।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন জ্বালানি এবং খনিজ বিভাগের সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ও বিদ্যুত বিভাগের সবিচ মনোয়ার ইসলাম।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য ২টি ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ করেন । অনুষ্ঠানে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অগ্রগতিভিত্তিক একটি তথ্যচিত্রও পরিবেশিত হয়।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী ও বেগবান করবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা ভাষণে বলেন, বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টার ফলে দেশে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালের ২২০ কিলোওয়াট আওয়ার থেকে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে বর্তমানে ৪০৭ কিলোওয়াট আওয়ারে দাঁড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ক্রমাগত দেশের গ্রামীণ এলাকায় সম্প্রসারণের ফলে ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র স্থাপন, গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন, প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সর্বস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারসহ আধুনিক প্রযুক্তির উপকরণ ব্যবহারকরণ, ইন্টারনেট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে পরিবেশ, স্বাস্থ্য, নারী অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ৯,৮৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮টি কয়লাভিত্তিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এছাড়াও আমরা রূপপুরে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে রাশিয়ার সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আগামী ২০২৪ সাল নাগাদ নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে ২২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক জ্বালানির প্রায় তিন-চতুর্থাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস দ্বারা পূরণ করা হয়। সরকারের দূরদর্শী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে জ্বালানি খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ২০০৯ সাল হতে এ পর্যন্ত নতুন তিনটি গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের গড় উৎপাদন দৈনিক ১,৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট হতে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দৈনিক ২,৭৪০ মিলিয়ন ঘনফুট।