

অনলাইন ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সহিংসতায় আক্রান্ত রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে জরুরি খাদ্য সরবরাহ কর্মসূচি স্থগিত করে দিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।
গতকাল শনিবার ডব্লিউএফপি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত করায় ঝুঁকিপূর্ণ ও অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত আড়াই লাখ মানুষের ওপর প্রভাব পড়বে।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় অভ্যন্তরীণভাবে গৃহহীন দুই লাখ ৫০ হাজার এবং অন্যান্য অতিদরিদ্র মানুষের মধ্যে যে খাবার সাহায্য দেওয়া হতো তা স্থগিত করা হলো। এদের মধ্যে রাখাইন রাজ্যেই বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা এক লাখ ২০ হাজার মানুষ ডব্লিউএফপির খাবারের ওপরই নির্ভর করত, যাদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা। ফলে আড়াই লাখ মানুষের খাদ্যের সংস্থান হতো। কিন্তু এ কর্মসূচি স্থগিত করায় তাদের খাদ্য নিরাপত্তায় চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হলো।
তবে ডব্লিউএফপির বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, চলমান সহিংসতায় বিপদগ্রস্ত সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সাহায্য কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা করছেন তাঁরা। বর্তমান সহিংসতায় নতুন আরো যেসব লোক আক্রান্ত হবে তাদেরকেও সাহায্য দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে জাতিসংঘ।
অন্যদিকে ডব্লিউএফপিসহ ত্রাণ বিষয়ক এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাদের দাবি, এসব সংস্থার রেশন যাচ্ছে রোহিঙ্গা উগ্রপন্থিদের হাতে। সেই উগ্রপন্থিরা গত ২৪ শে আগস্ট নিরাপত্তা পোস্টে হামলা চালিয়েছে। সেই থেকে রাখাইনে ভয়াবহ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। রাখাইনে জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতা মাঝে মাঝেই দেখা দেয়। কিন্তু এবারের সহিংসতা সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। গত ৫ বছরে এমন ভয়াবহতা দেখা যায় নি।
এদিকে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) রাখাইন রাজ্যে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। যদিও সেখান থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছে, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত করতে দেশটির সামরিক বাহিনী তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে এবং হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। অন্যদিকে এআরএসএর দাবি, তারা মিয়ানমার সরকারের সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যুদ্ধ করছে।
সেই সঙ্গে মিয়ানমার আরো অভিযোগ করে বলছে, পুলিশ ও সেনাক্যাম্পে যেসব ‘সন্ত্রাসী’ হামলা চালিয়েছে তাদেরকে গোপনে সাহায্য ও সমর্থন করছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে ডব্লিউএফপির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রয়েছেন। এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখার কথা বলেছিল ডব্লিউএফপিএ। তার মধ্যেই খাবার সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা আসে জতিসংঘের এই সংস্থার পক্ষ থেকে।
এর আগে ২০১২ সালের জুনেও রাখাইন রাজ্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আক্রান্ত হয়েছিল। তখন প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা নিহত হন। ওই সময় দাঙ্গার কবলে পড়ে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
সম্পাদনাকারী / আবদুল্লাহ রিয়েল