

আলোকিত ডেস্ক->>>
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের গ্রামগুলোর মসজিদ, মার্কেট ও স্কুল একসময় রোহিঙ্গা মুসলিমদের পদচারণায় সরগরম থাকতো, কিন্তু এখন সেখানে শুনশান নিরবতা। রাখাইনে সেনা অভিযানে সেখান থেকে পালিয়ে সাড়ে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনে সহিংসতায় নিহত হয়েছে অন্তত পাঁচশো। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ঘটনাকে ইতোমধ্যেই ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ।
সেনা অভিযানে রাখাইনের মংডু এলাকার অনেকাংশ পুড়ে গেছে। খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে জাতিসংঘ সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করছে- মিয়ানমার সরকারের এমন অভিযোগের মুখে বিশ্বসংস্থাটি সেখানে ত্রাণ তৎপরতা বন্ধ করে দেয়। আর জাতিসংঘ ত্রাণ তৎপরতা বন্ধ ঘোষণার পর থেকে খুব কম ত্রাণ ও সহযোগিতা রাখাইনে পৌঁছেছে। রাজধানী সিতওয়েতে দুইবার রেডক্রসের ত্রাণবহর আটকে দিয়েছে স্থানীয় রাখাইনরা। গত অক্টোবর মাসে রাখাইনের ইন উ শে কিয়া গ্রামের বাসিন্দারা অভিযোগ করে যে, সেনাবাহিনী তাদের গ্রামে হামলা চালিয়েছে এবং গ্রামের নারীদের ধর্ষণ করেছে।
ওই গ্রামের একজন শিক্ষক ফোনে রয়টার্সকে বলেন, ‘ওই গ্রামে মোট আট’শটি পরিবার ছিল। কিন্তু এখন সেখানে মাত্র এক’শর মতো পরিবার আছে। আর যারা সেখানে রয়ে গেছে তাদেরকে সেনাদের সঙ্গে অনেক লুকোচুরি করেই থাকতে হচ্ছে। কারণ সেনা সদস্যরা সকালে গ্রামে তাদের খুঁজতে আসে। সে সময় বাসিন্দারা জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ে এবং রাতে তারা বাড়িতে ফিরে আসে।’
আজ সন্ধ্যায় খাওয়ার মতো কোনও খাবার নেই আমাদের আর কিইবা করার আছে? আমরা জঙ্গলের কাছাকাছি থাকি। সেখানে অনেক লতাপাতা আছে; আমরা তাই খাচ্ছি। এরপর একটু পানি সংগ্রহ করছি খাবার জন্য। এভাবেই বেঁচে আছি আমরা” বলেন ওই শিক্ষক। কিন্তু ওই ওই শিক্ষকের নাম প্রকাশ করেনি রয়টার্স।
কারণ তাদের ওপর নির্দেশনা জারি করা আছে যেন কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলে।
তিনি জানান, গর্ভবতী স্ত্রী, ছয় সন্তান আর বুড়ো বাবা-মাকে নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার মতো অবস্থা তার নেই।
যদিও মিয়ানমার সরকার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অত্যাচার নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে তারা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। মংডুর ইয়ে খাট চোং গোয়া সোন গ্রামের বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সী সুয়াইদ ইসলাম বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সেনা সদস্য আর পুলিশ যদি আমাদের খুঁজে পায় আর গুলি করে মেরে ফেলে, তাই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে এসেছি’
নিউইয়র্ক-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে ২১৪টি গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। স্যাটেলাইটের ছবি পর্যালোচনা করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। অন্যদিকে মিয়ানমার সরকার বলেছে রাখাইনে ছয় হাজার আটশো’র বেশিঘরবাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে, কিন্তু এর জন্য তারা রোহিঙ্গা গ্রামবাসী ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসাকে দায়ী করছে।
এ বিষয়ে অং সান সু চি’র মুখপাত্র বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা ঘরবাড়িগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে, এমন তথ্য আমাদের কাছে আছে।’
সূত্র-বিবিসি অনলাইন