ছাগলনাইয়ায় চোর সন্দেহে ৩ যুবককে নির্যাতন ইউপি চেয়ারম্যান গরীব শাহ লাঞ্ছিত

আপডেট : September, 1, 2018, 7:55 pm

জাবেদ হোসাইন মামুন->>>
ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের মাইদ বাড়িতে চোর সন্দেহে নির্মাণ শ্রমিক সালা উদ্দিন (২৪), সিএনজি অটোরিক্সা চালক মো: ফারুক (২২) ও মাটিয়া গোধা কসাই কোনার লেংড়া শাহাদাতকে (২০) আটক করে বাসার গ্রীলের সঙ্গে হাত বেঁধে অমানুসিক শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে আওয়ামীলীগ নেতারা। এ ঘটনার জেরে নির্যাতনকারী উপজেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক ও উত্তর পানুয়া দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মাস্টার আবুল কালাম বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর হাতে এবং মহামায়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি গরীব শাহ হোসেন বাদশা চৌধুরী ছাত্রলীগের নেতাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
এলাকাবাসী সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক ও উত্তর পানুয়া দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মাস্টার আবুল কালাম এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি চুরি হয়ে যায়। বুধবার সকালে মাস্টার আবুল কালাম, এমরান হোসেন ও কসাই মহিম এর নেতৃত্বে কতিপয় আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা চোর সন্দেহে মাটিয়া গোধা গ্রামের পাকিস্থান প্রবাসী আলা উদ্দিনের ছেলে নির্মাণ শ্রমিক সালা উদ্দিন (২৪), জয়নগর গ্রামের বোচা মিয়ার বাড়ির ওমান প্রবাসী আলেয়া বেগমের ছেলে সিএনজি অটোরিক্সা চালক মো: ফারুক (২২) ও মাটিয়া গোধা কসাই কোনার লেংড়া শাহাদাতকে (২০) তাদের নিজ বাড়ি থেকে ডেকে জয়নগর গ্রামের নিজ বাড়িতে নিয়ে আটক করে বাসার গ্রীলের সঙ্গে হাত বেঁধে শরীরে সুঁই ঢুকিয়ে এবং পিটিয়ে অমানষিক শারীরিক নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে বিকালে সিএনজি অটোরিক্সা চালক মো: ফারুক ও লেংড়া শাহাদাতের অভিভাবকদের নিকট থেকে স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয় এবং নির্মাণ শ্রমিক সালা উদ্দিনকে ছাগলনাইয়া থানার পুলিশের নিকট সোপর্দ করে। এএসআই জাহাঙ্গীর আহত সালা উদ্দিনকে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করান।
ঘটনাটি মিমাংসা করার জন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি গরীবশাহ হোসেন বাদশা চৌধুরী, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহ জাহান মিনু ও সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন মাস্টারকে দায়িত্ব প্রদান করেন। শুক্রবার বিকালে শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শালিসদারদের নানা তালবাহানার কারনে নির্যাতিত নির্মাণ শ্রমিক সালা উদ্দিনের মাটিয়া গোধা গ্রামের লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে কালাম মাস্টারকে ধাওয়া করে এবং গালাগাল করে লাঞ্ছিত করে। একপর্যায় গ্রামবাসী কালাম মাস্টারের বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ফলে শালিস পন্ড হয়ে যায়।
রাতে চাঁদগাজী বটতলী আওয়ামীলীগ অফিসে মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলের উপস্থিতিতে আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কালাম মাস্টারের বাড়িতে হামলাকারীদের একটি তালিকা তৈরী করা হয় থানায় মামলা করার জন্য। ইউপি চেয়ারম্যান তালিকা থেকে মাটিয়া গোধা গ্রামের আবদুল জলিলের (৫৫) নামটি বাদ দেয়ার জন্য বললে কথাকাটাকাটির একপর্যায় ছাত্রলীগ নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে গরীব শাহ হোসেন বাদশা চৌধুরীকে মারধর করে। এ ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা টিটু ও সাদ্দামকে পুলিশে সোপর্দ করেন সোহেল চৌধুরী।
ছাগলনাইয়া থানার ওসি (তদন্ত) সুদীপ রায় জানান, সালা উদ্দিনকে একটি চুরির মামলায় আটক দেখিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে।
ছাগলনাইয়া থানার ওসি এম.এম মুর্শেদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।