সেই বিতর্কিত সিফাতুল্লাহ অস্ট্রিয়ায় গ্রেফতার!

আপডেট : April, 28, 2019, 1:25 pm

আলোকিত সময় ডেক্স->>>

সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরণের অশ্লীল, অসঙ্গতিপূর্ণ ভিডিওবার্তা ছড়িয়ে সমালোচিত-বিতর্কিত ভিডিও ব্লগার সেফাত উল্লাহকে (সেফুদা) ধর্ম অবমাননার দায়ে গ্রেফতার করেছে অষ্ট্রিয়ার পুলিশ।

সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অস্ট্রিয়ায় বসে ফেসবুক লাইভে ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত হানার কারণে বেশ সমালোচিত হয়েছেন সেফুদা।

জানা যায়, সেফাত উল্লার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় তিনটি মামলা দায়ের করে অস্ট্রিয়ান পুলিশ। তার মামলাগুলো অস্ট্রিয়া ক্রিমিনাল পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে অস্ট্রিয়ান ক্রাইম ইউনিট অপরাধের সত্যতা পেয়ে তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার হুমকির জন্য পৃথক আরেকটি মামলা করেছেন।

এছাড়া সেফাত উল্লাহর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মামলাসহ তিনটি মামলা হয়েছে অষ্ট্রিয়ায়। আগামীকাল আরেকটি মামলা আদালতে উত্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। বর্তমানে তিনি পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন।

অস্ট্রিয়ান এক আইনজীবী জানিয়েছে, যদি সেফাতুল্লাহ দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে দেশের আইন অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ৬ মাস থেকে ১ বৎসরের কারাদন্ড। পাশাপাশি তার সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর যদি পাগল প্রমাণিত হয় তাহলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

২৫ বছর আগে যে কারণে ‘সেফুদা’কে তার বাবা ত্যাজ্যপুত্র করেছিলো।

মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরিফ ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল মন্তব্যকারী সেফাতউল্লাহ ওরফে সেফু বাবার ত্যাজ্যপুত্র। সেই ২৫ বছর আগে তাকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন তার বাবা হাজী আলী আকবর।

সেফু চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ১৩ নং সূচিপাড়া উত্তর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড চেড়িয়ারা গ্রামের মৃত হাজী আলী আকবরের পুত্র। তার বাবা তিনটি বিয়ে করেন। সব ঘর মিলে সেফুর ভাই-বোন ১৫ জনের অধিক। সেফুর আপন ভাই-বোনের সংখ্যা জানা গেছে ৮ জন। তবে কারো সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই।

সেফুর একমাত্র সন্তান ইংল্যান্ডে থাকেন, তার স্ত্রী থাকেন ঢাকায়। প্রায় ২২ বছর আগে সেফু অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় চলে যান। পরিবারের অবাধ্য এই সেফু একজন বিকারগ্রস্ত প্রতিবন্ধী বলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানান।

শুক্রবার সকালে শাহরাস্তি উপজেলার চেড়িয়ারা গ্রামের সেফুদার চাচাতো ভাই রেদোয়ান হোসেন সেন্টুর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই সেফু পরিবারের অবাধ্য হয়ে চলতেন।

পরিবারের কাছে জেনেছি, তাকে একবার পাগলা গারদ ও জেলখানায় রাখা হয়েছিলো। তার বাবা হাজী আলী আকবর কোনো সম্পত্তি তাকে দেননি। ত্যাজ্যপুত্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এমনকি হাজী আলী আকবর মারা যাওয়ার সময় দেশে আসেননি এই সেফুদা। পরিবারের কারো সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই।

সেফুদার বড় ভাই শামছুল আলম মজুমদার বলেন, কিশোর বয়সে সেফাতকে আমার বাবা পাবনা পাগলা গারদে দিয়ে আসে। সেখানে কয়েক মাস তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সে মাঝেমধ্যে বাড়িতে ফোন করে। ফোন করেই আমাদের গালিগালাজ করে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহুল আলোচিত-সমালোচিত সেফাত উল্লাহ সেফুকে দেশে অথবা বিদেশে আইনের হাতে তুলে দিতে পারলে ২ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল।

স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননাকারী সেফাত উল্লাহ সেফুকে দেশ এবং বিদেশের মাটিতে যারা আইনের আওতায় সোপর্দ করতে পারবে, তাদের জন্য ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নগদ দুই লাখ টাকা পুরস্কার প্রদান করা হবে।’

সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি নানা ধরণের অশ্লীল, অসঙ্গতিপূর্ণ ভিডিওবার্তা ছড়িয়ে বেশ আলোচনায় সিফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদা নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি। নানা বিষয় নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে অল্প সময়ে ‘তারকা’ বনে যান সেফুদা। প্রথমের দিকে সেফুদা নামটি তার নামের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তখন তার ফেসবুক লাইভ দেখার মতো মানুষও ছিল না।

সেই সময়য় শুধু সিফাতউল্লাহ নামেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত ছিলেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের এক ক্রিকেটারের সাথে এক তরুণীর ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময়য় সিফাত উল্লাহ ফেসবুকে একটি লাইভ করেন। তখন থেকেই মূলত তার লাইভে দর্শক বাড়তে থাকে।

বর্তমানে অস্ট্রিয়া প্রবাসী এ বাংলাদেশির এমন আচরণে অনেকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে তার পরিবার। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। ১৯৯০ সাল থেকে তিনি অস্ট্রিয়ার রাজধানীর ভিয়েনায় বসবাস করছেন।

অল্প সময়ে ফেসবুক তারকা বনে যাওয়া এ সেফুদা মূলত মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তার এমন কর্মকাণ্ডে পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজন খুবই লজ্জিত বলেন তার স্ত্রী। জানা যায় তার পুরো নাম সেফাতউল্লাহ মজুমদার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা পড়া করেছেন।

সেফুদার কর্মকাণ্ডে তার পরিবার বিব্রত। সিফাত উল্লাহর স্ত্রী এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা এখন কি করতে পারি, এগুলো বন্ধ করার কি কোনো উপায় নেই? সে তো অসুস্থ কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষ কি এগুলো বন্ধ করে দিতে পারেনা? উনিতো আসলে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত।

তিনি যদি এই রোগে আক্রান্ত হন তাহলে চাকরি করছেন কীভাবে? সিফাত উল্লাহ একাই অস্ট্রিয়ার একটি বাসায় থাকেন। পরিপাটি হয়ে অফিসে যান, অফিস থেকে ফেরেন। তার ফেসবুক লাইভেও এসবের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে তিনি অসলংগ্ন কথাবার্তা বলেন।

বাংলাদেশ পুলিশের মহা পরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারি জানান, এধরনের যারা দেশের বাইরে বসে দেশের সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করে নিজ দেশের সম্মান নষ্ট করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র: ডেইলিসংবাদডটকম