নুসরাত হত্যা মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা নুসরাতকে ভুলবোনা

আপডেট : June, 8, 2019, 8:10 pm

আলোকিত সময় ডেস্ক>>>

ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেছেন, মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা কান্ডের তিন মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। দেশের অনেক মানুষ নুসরাতের কথা ভুলে গেছে। দেশবাসী যে নুসরাতকে ভুলে নাই সেটা স্মরণ করিয়ে দিতে আমি সিলেটের হবিগঞ্জ থেকে ফেনীর সোনাগাজীতে নুসরাতের কবর জিয়ারত করতে এসেছি। নুসরাতের পরিবারের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। মানবিকতা ও নীতি নৈতিকতা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম অপরাধে মামলাটি করেছি। কারণ নুমরাতের যে ভিডিওটি ওসি মোয়াজ্জেম করেছিল। তা হৃদয় বিদারক! আমার দায়ের করা মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়েছে। সে বর্তমানে পুলিশের খাতায় পলাতক। শুধু মাত্র ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ছাড়া নুসরাত হত্যা মামলার সকল আসামি কারাগারে রয়েছে। তবে ওসি মোয়াজ্জেমও গ্রেফতার হওয়া ছাড়া তার সামনে আর কোন পথ নাই। মামলার চার্জশীট হয়েছে। জননেত্রি শেখ হাসিনা নুসরাত হত্যা মামলার দায়ীত্ব নিয়েছেন। তিনি নিজেই মামলাটি তদারকি করছেন। ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনও খুব শীঘ্রই গ্রেফতার হয়ে আইনের আওতায় আসবেন। তিনি পালিয়ে কখনো থাকতে পারবেননা। যত বাধাই আসুক না কেন আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা পিছু হঠবোনা। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসী তথা আমরা নুসরাত ও তার পরিবারকে ভুলবোনা। এটাই হচ্ছে আমার প্রথম এবং প্রধান কাজ। নুসরাতের পরিবার চাইলে আমি তাদেরকে হাই কোর্ট -সুপ্রিম কোর্টেও আইনী সহায়তা দেবো। ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে নাইবার ক্রাইম অপরাধে দায়ের করা মামলায় আমি একাই লড়বো।
যে মেয়েটি হাতে মেহেদী পরে পিতা মাতা ও তিন ভাইয়ের সাথে একত্রে ঈদ করতো। সে মেয়েটি আজ এই মাটির নীচে শুয়ে আছে। বাংলাদেশে নুসরাতের মত হাজারো নুসরাত মাটির নীচে শুয়ে আছে নিরবে নিভৃতে। কেউ বিচার পাচ্ছেন আবার কেউ বিচার পাচ্ছেননা। নুসরাতের কবরের পাশে গাছের ডালপালা বড় হয়ে গেছে। অনেকে মনে করছেন নুসরাত হত্যা মামলাটিও মাটির নীচে চাপা পড়ে গেছে। এটি মনে করার কোন কারণ নাই। নুসরাত হত্যা মামলার রায়ের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করে দিতে চাই নুসরাতের মত আর কোন মেয়েকে যেন দুর্বৃত্তদের হাতে প্রাণ অকালে প্রাণ দিতে না হয়।
তিন মাস পর নুসরাতের কবরের পাশে এসেছি বাংলাদেশের মানুষদের পক্ষ থেকে সে ও তার পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইতে। কারণ নুসোতকে আমরা পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিতে পারি নাই। এটা আমাদের ব্যর্থতা। বাংলাদেশে আরো অনেক নুসরাত আছে যারা এরকম নিরবে নিভৃতে। কারণ এই নুসরাতের মত মেয়েরা যদি আমাদেরকে মাফ না করে তাহলে এই বাংলাদেশ কোনদিন আগাবেনা। আমি জাতির পক্ষ থেকে নুসরাতের মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে আশা করছি ফেনীর মাটি থেকে ন্যায় বিচারের পতাকা উড়বে। আর কোন নুসরাতকে এভাবে প্রাণ হারাতে হবেনা।
শনিবার বিকালে ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত প্রতিবাদি মাদ্রাসা ছাক্রী নুসরাত জাহান রাফির গ্রামের বাড়িতে এসে কবরাস্থান ও মাদ্রাসার ঘটনাস্থলে ফেসবুক লাইভে এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি এসময় নুসরাতের পরিবারের কাছে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের গ্রেফতারের অনুভুতি জানতে চাইলে তারা ওসি মোয়াজ্জেমের গ্রেফতার দাবী করে মামলাটি তদারকির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
প্রসঙ্গত, ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আলিম (এইচএসসি) পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে যান নুসরাত। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ৪-৫ জন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। পরে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত মারা যান। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আট আসামিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। একইসঙ্গে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর আগে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হন ওই ছাত্রী। সে ঘটনায় তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে অধ্যক্ষকে আসামি করে মামলা করলে মামলাটি তুলে নিতে চাপ দেয় ওই ছাত্রীকে। মামলাটি তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় গত ৬এপ্রিল তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় অধ্যক্ষের অনুসারীরা।