সোনাগাজীতে মামলার বাদিকে হত্যা, ভাংচুর, স্বর্নলঙ্কার ও টাকা লুট  স্ত্রী হত্যার দশ বছর স্বামীকে হত্যা

আপডেট : August, 2, 2019, 4:21 pm

জাবেদ হোসাইন মামুন->>>
ফেনীর সোনাগাজীতে মামলা দায়েরের ৯দিনের মাথায় জামাল উদ্দিন (৫৫) নামে এক প্রবাসীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে, পিটিয়ে এবং চেতনা নাশক স্প্রে নিক্ষেপ করে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।
এসময় তার বসত ঘরের দরজা জানালার ব্যাপক ভাংচুর, ১২ ভরি স্বর্নালঙ্কার এবং নগদ ২ লাখ টাকা লুটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া গ্রামের ছয় ভাইদের বাড়িতে এঘটনা ঘটে। সোনাগাজী মডেল থানার পুলিশ আজিমা আক্তার (৫০) নামে এক মহিলাকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার জানায়, আলতাফ আলীর ছেলে সৌদি প্রবাসী জামাল উদ্দিনের সাথে একই বাড়ির শাহ আলম গংদের সাথে দীর্ঘ দিন যাবৎ জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। আদালতের রায়ও জামাল উদ্দিনের পক্ষে হয়। আদালতের রায় পেয়ে গত ২৪ জুলাই জামাল উদ্দিন নির্মাণ শ্রমিকদের নিয়ে বাড়ির সীমানা প্রচীর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এসময় শাহ আলমের নেতৃত্বে তার ৮-১০জন ভাড়াটে সন্ত্রাসী জামাল উদ্দিন ও তার তিনজন নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে।
এ ঘটনায় জামাল উদ্দিন বাদি হয়ে শাহ আলমকে প্রধান আসামি করে ৭জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। সোনাগাজী মডেল থানার মামলা নং-১৪, তাং – ২৪-০৭-২০১৯খ্রি. মামলার অপরাপর আসামিরা হলেন রিপন, হৃদয়, আলা উদ্দিন, জাহিদ, আমেনা খাতুন, আজিমা খাতুন ও অজ্ঞাত নামা ৫-৬জন।
সোনাগাজী মডেল থানার পুলিশ মামলার প্রধান আসামি শাহ আলমকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। অপরাপর আসামিরা ২৮জুলাই ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে জামিন পান। জামিনে এসে জামাল উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যদের ঘর লুট ও প্রাণ নাশের হুমকি দিতে থাকে।
 বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে শাহ আলমের ছেলে রিয়াদ, হৃদয়, আলা উদ্দিন স্থানীয় সন্ত্রাসী  জাহিদ, দাউদুল ইসলাম ও জামসেদ আলমের নেতৃত্বে ১৫-২০জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী মামলার বাদি প্রবাসী জামাল উদ্দিনের বসত ঘরের জানালার কাঁচ ভাঙচুর শুরু করে। এসময় জামাল উদ্দিন দরজা খুলে দিলে ঘরে ঢুকে তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে গলা চেপে ধরে মুখে চেতনা নাশক স্প্রে নিক্ষেপ করলে সে অচেতন হয়ে পড়ে। এসময় তার পুত্রবধুর কক্ষে ঢুকে তাকে পিটিয়ে আহত করে। আলমারি ভেঙে ১২ ভরি স্বর্নালঙ্কার ও তোষকের নীচে থাকা নগদ ২ লাখ টাকা লুটে নেয় দুর্বৃত্তরা। এসময় ঘরে থাকা পানির বেসিন, দরজা, জানালা ও আসবাবপত্রের ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। বৃহস্পতিবার ভোরে জামাল উদ্দিনকে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে ফেনী আধুনিক সদর হাসাপাতালে এবং সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে নয়টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। তার পুত্রবধু জাকিয়া আক্তারকে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহত জামাল উদ্দিনের পুত্রবধু জাকিয়া আক্তার বাদি হয়ে রিয়াদ, হৃদয়, আলা উদ্দিন, জাহিদ, দাউদুল ইসলাম, জামসেদ, আজিমা আক্তার, আমেনা খাতুন সহ ৮জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫-৬জনকে অজ্ঞাত আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। সোনাগাজী মডেল থানার মামলা নং-২, তাং-০২-০৮-২০১৯খ্রি.
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ইতোমধ্যে এজাহার নামীয় একজন নারী আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত; ২০০৯ সালে গভীর রাতে ঘরে ঢুকে উল্লেখিত আসামিদের কয়েকজন ও তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা জামাল উদ্দিনের স্ত্রী আয়েশা আক্তারকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। সে মামলাটিও আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। নিহতের দুই জন প্রতিবন্ধী সন্তানের জীবন নিয়ে নিহতের স্বজনেরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। শুক্রবার বিকাল ৩টায় নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরাস্থানে দাফন করা হয়েছে।