সোনাগাজীতে অপরিকল্পিতভাবে খাল খনন গ্রামীণ জনপদের সড়ক, পুল, কালভার্ট ও ব্রিজের ব্যাপক ক্ষতি

আপডেট : August, 23, 2019, 12:01 am

জাবেদ হোসাইন মামুন->>>
ফেনীর সোনাগাজীতে অপরিকল্পিতভাবে খাল খননের ফলে ঘর, বাড়ি, সড়ক, পুল, কালভার্ট ও ব্রিজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা এই খাল খননকে খাল কেটে কুমির আনার সাথে তুলনা করেছেন। স্থানীয় মাস্তান, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের দিয়ে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে খাল খননের মাধ্যমে সাধারন মানুষ ও সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। খালের মাটি বিক্রি সহ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে খাল খনন করায় সাধারন মানুষ নানা ভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের রোশানলে পড়ে বিপুল সংখ্যক লোকের বসত ঘর ভেঙে খালে বিলীন হয়েছে। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায় ব্যক্তিমালিকানাধীন বসত ঘর ভেঙে ফেলার অভিযোগও উঠেছে এসব সন্ত্রাসী মাস্তানদের বিরুদ্ধে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কতিপয় চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। পানি নিষ্কাশন ও কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে সরকার খাল খনন কর্মসূচী হাতে নেয়। এডিবির অর্থায়নে এই কর্মসূচীর আওতায় ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ফেনী জেলার ৪৭টি ও মীরসরাই উপজেলার দুটি  খাল খননের জন্য ৪৫০কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। ৬টি প্যাকেজে আর এ বি-আর সি- এসব এ- আর ই (জেভিসি এ) কাজটি পায়।
এর মধ্যে সোনাগাজী উপজেলার ৩৭টি খালের প্রায় ১১০ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়।
 দরপত্রের শর্ত মোতাবেক দিনমজুর দিয়ে খাল খনন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও ঠিকাদার ও স্থানীয় সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের পকেট ভারী করতে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে খালগুলো খনন করা হয়েছে। স্থানীয় সন্ত্রাসী মাস্তানেরা পেশী শক্তির প্রভাব খাটিয়ে খাল খনন করতে গিয়ে নানা রকম অপরাধে জড়িয়েছেন। চতুর্মুখী বাণিজ্য চালিয়েছে এসব দুবর্ত্তরা। প্রথমে তারা খালের মাটি খনন করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন লোকদের নিকট মাটিগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন। খালের দুই পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন গাছ গুলো কেটে এবং লোড আনলোড করে দিয়ে গাছের মালিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। খালের এক পাশে দূর্বল আর অন্য পাশে প্রভাবশালীদের জমি থাকলে অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের জমির দিকে গভীর ভাবে খাল খনন করে এবং মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রভাবশালীদের জমি রক্ষা করে খাল খনন করেছে তারা। যার ফলে দুর্বল লোকটির জমিগুলো খালে বিলীণ করে দিয়েছে। আবার জমির মালিকেরা যদি দুই পক্ষই প্রভাবশালী হয়, তখন উভয় পক্ষ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে দুই পক্ষের জমি রক্ষা করে দায়সারাভাবে খাল খনন করে নিজের পকেট ভারী করেছে ওরা। আবার যে পক্ষ চাঁদা দেয় নাই, তাদের মালিকীয় জমির অংশে গভীর করে খনন করে ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতি করেছে ওরা। আবার কিছু কিছু অংশে প্রতিপক্ষ লোকদের থেকে মোটা অংকের চাঁদা নিয়ে সরকারি সড়ক বা রাস্তার দিকে গভীর করে খাল খনন করে সড়কগুলো খালে বিলীণ করে দিয়েছে এসব দুর্বৃত্তরা। খালের পাশে যাদের বাড়ি-ঘর ছিল তাদের কাছ থেকেও ঘর ভাঙা আর রক্ষার নামে হাতিয়ে নিয়েছে কাডি কাডি টাকা। দুর্বৃত্তদের মাধ্যমে খাল খননে অসংখ্য দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগে সাধারন মানুষ, জনপ্রতিনিধি ও জমির মালিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ অসন্তোষ বিরাজমান । এলজিইডির হিসেব মতে সোনাগাজী উপজেলার ২৬টি পাকা ও কাঁচা সড়ক খালের মধ্যে বিলীণ হয়ে গেছে। এছাড়া ২৫টি পুল, কালভার্ট ও ব্রিজ খালে বিলীণ হয়ে গেছে। অনেকগুলো সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অসংখ্য ঘর-বাড়ি খালে বিলীণ হয়েছে। মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। এত যে গভীর করে খালের মাটি বিক্রি করা হয়েছে ফ্লাইওয়াল নির্মাণ করেও সড়কগুলো রক্ষা করা যাচ্ছেনা। কোথাও কোথাও ফ্লাইওয়াল সহ সড়কগুলো ধ্বসে গেছে। খাল খননে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কার্যকর তদারকি না থাকায় এমনটা ঘটেছে বলে সচেতন মহলের অভিযোগ।
ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, পুল, কালভার্ট ও ব্রিজ সংস্কারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীর পক্ষ থেকে পাউবো কর্তৃপক্ষের নিকট তালিকা প্রেরণ করলেও তারা কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন না করায় তারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। এনিয়ে জেলার উন্নয়ন সমন্বয় সভায়ও তারা একাধিকবার অভিযোগ করেছেন। কোন ফল না পেয়ে তারাও চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল পারভেজ জানান, পাউবো কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে রাষ্ট্র ও জনগণের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেলে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও স্থাপনাগুলো সংস্কারের তালিকা প্রদান করা হলেও পাউবো কর্তৃপক্ষ কোন সদুত্তর দেয়নি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
তার দাবি কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা, স্থানীয় সসন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের কারণে সরকারের সব অর্জন ম্লান হতে চলেছে।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কাসেম জানান, পাউবো কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতার ফলে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক, পুল, কালভার্ট ও ব্রিজের চরম ক্ষতি হয়েছে। পাউবো কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা প্রেরণ করেছি। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় আপত্তি জানিয়েছি কোন ফল পাওয়া যায়নি। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতে তিনি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশেরও অনুরোধ করেন।
সোনাগাজী সদরে ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল আরেফিন, চরচান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন, আমিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল আলম জহির সহ কয়েকজন চেয়ারম্যান তীব্র ক্ষোভ অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, অসাধু কর্মকর্তা আর কতিপয় চাঁদাবাজদের কারণে সরকারের সব অর্জন ম্লান হতে চলেছে। সাধারন মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হলো সরকারী সম্পত্তিরও ক্ষতি হয়ে গেল।
এ ব্যাপারেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) নাছির উদ্দিন জানান, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে খালগুলো খননের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এডিবি’র নিজস্ব কনসালটেন্ট দ্বারাকাজগুলো তদারকি করা হয়েছে। এ ব্যপারে লিখিত কোন অভিযোগ পাননি। ফেনী পওর বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নূরনবী জানান, কিছু কিছু অংশে অনিয়ম হয়েছে শুনেছেন। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।