
জাবেদ হোসাইন মামুন->>>
ফেনীর সোনাগাজীর দারুল উলুম আল হোসাইনিয়া ওলামা বাজার মাদ্রাসার ৬৩ সালা দস্তারবন্দী মহাসম্মেলন কাল ২৯জানুয়ারি বুধবার সকাল থেকে শুরু হচ্ছে। ৩১ জানুয়ারি রাতে এই মহাসম্মেলন শেষ হবে। উক্ত মহাসম্মেলনে তিন দিনে প্রায় দুই হাজার প্রাক্তন ছাত্রকে পাগড়ী প্রদান করা হবে। আল্লামা মাও. আহম্মদ শফি সহ দেশ বিদেশের প্রায় ২০জন আলেম মহাসম্মেনে তাশরিফ আনার কথা রয়েছে। মহাসম্মেলন সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার বহন করতে প্রায় দুই কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। মহাসম্মলনে সভাপতিত্ব করবেন উক্ত মাদ্রাসার মোহতামিম শায়খুল হাদিস আল্লামা নুরুল ইসলাম আদীব। উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের ওলামা বাজারে ১৯৪৬ সালে সাড়ে ১৭ একর জমির উপর মাদ্রাসাটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে ওই মাদ্রাসায় ১ হাজার ৭০৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। তম্মধ্যে এক হাজার ১০১জন।
মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালনা কমিটির অন্যতম দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম মাওলানা হাকীম আব্দুল হক। যিনি প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের দায়িত্ব পালনও করছিলেন। প্রতিষ্ঠাতা পরিচালনা কমিটিতে মরহুম মাওলানা ফজলুল হক, ওলামা বাজারের পাশেই মরহুম আবুল খায়ের সওদাগর, সোনাগাজী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পাটোয়ারী বাড়ীর মরহুম হাফেজ ইলিয়াস, মরহুম মতিউর রহমান। প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম মোহতামীমের দায়িত্ব পালন করছেন শায়েখ মাওলানা ফজলুল হক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় মোহতামীম ছিলেন, আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল হালিম, আলহাজ্ব মাওলানা ছাইয়েদ আহম্মেদ।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এপর্যন্ত ৬৩ ব্যাচ দাওরাহ্ হাদীস শেষ করেছে। প্রতিষ্ঠানের বর্তমান মোহতামীমের দায়িত্বপালন করছেন সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা শায়খুল হাদিস আল্লামা নুরুল ইসলাম আদীব। তিনি গত ১৯৫৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা শুরু করে ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে মোহতামিমের দায়ীত্ব পালন করছেন। এছাড়াও নায়েবে মোহতামীম হাফেজ মাওলানা আবু তাহের ও হাফেজ আবু নাছের মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ শিক্ষা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
বতর্মানে ওই মাদ্রাসায় আরবী, আরবী ভাষা, উর্দূ ও ফার্সি ভাষা , নাজেরা, ক্বিরাত ও তাজবীদ, হিফ্জ ও হস্তলিপি বিভাগের নুরানীর প্লে, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, কিতাব বিভাগের ইয়াজ দাহুম, দাহুম, নাহুম, হস্তুম, হাপ্তুম, সশুম, পাঞ্জুম, সাহরাম, সুয়াম, মেশকাত, দাওরাহ ও ইফতাহ ক্লাসে প্রায় ১হাজার পাঁচশত শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। যাদের শিক্ষার মানদন্ড তৈরীতে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয় প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা (জিপিএ ফাইভ) মোমতাজ পাবে তাদের জন্য সকালের নাস্তা একদম ফ্রি এবং অন্যদের চেয়ে স্পেশাল খানার ব্যবস্থা, পাক্ষিক সেমিনার, মাসিক পরামর্শমূলক বৈঠক, বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা, প্রতি সপ্তাহে মসজিদেও হাজিরার ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রতিষ্ঠান সার্বিক পরিচালনার জন্য ২১সদস্য বিশিষ্ট মজলিশে সূরা (পরামর্শ পরিষদ) রয়েছে। যাদের মধ্যে অন্যতম সদস্যরা হলেন, দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মোহতামিম আল্লামা আহমদ শফী, ঢাকা যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার মোহতামীম মাহমুদুল হাসান, প্রতিষ্ঠানের মোহতামিম নুরুল ইসলাম আদীব, শায়েখ জাকারিয়া রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান, ফেনীর রশীদিয়া মাদ্রাসার মোহতামীম মূফতি শহিদুল্লাহ প্রমুখ। তারা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ব্যয়ের অনুমোদন দিয়ে থাকেন। ১৬ সদস্য বিশিষ্ট মজলিশে আমেলার (কার্যনির্বাহী পরিষদ) উল্লেখযোগ্য সদস্য হলেন, প্রতিষ্ঠানের মোহতামীম নুরুল ইসলাম আদীব, নায়েবে মোহতামীম হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শিক্ষা সচিব হাফেজ মাওলানা আবুল হাসান আব্দুল্লাহ সহকারী মোহতামীম মাওলানা মোজাম্মেল হক, হাফেজ মহি উদ্দিন, সাবেক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, হাজী আশ্রাফ উদ্দিন লন্ডনী, শাহাদাত হোসেন কায়েস চৌধুরী প্রমুখ। এই কমিটির দায়িত্বশীলরা মজলিশে সূরার অনুমোদন করা কাজ গুলো বাস্তবায়ন করেন এবং ৯ সদস্য বিশিষ্ট মজলিশে ইলমী (শিক্ষা পরিষদ) প্রতিষ্ঠানের মোহতামিম নুরুল ইসলাম আদীব সহ শিক্ষক মন্ডলী রয়েছেন।
প্রাচীনতম এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে ১টি টিন সেট, ৬টি দো-তলা, ২টি তিন তলা, ১টি চার তলা, মেহমান খানা ১টি তিন তলা, মসজিদ ২টি, পুকুর দুইটি, টয়লেট ও প্রশ্রাাবখানা প্রায় ২০০টি ও টিউবওয়েল ১০টি রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক ব্যয় বিশাল অংকের। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিক্ষকদের বেতন টাকা, বিদ্যুৎ বিল ও বৃহত্তর একটি অংশ খানায় ব্যয় হয়। প্রতিষ্ঠানটি এরপরও থেমে নেই দেশবিদেশ থেকে আসা অর্থ দিয়ে চলছে দ্বীনি প্রতিষ্ঠানটি। আজীবন সদস্য রয়েছে ৩৫০জন, যাকাত-ফিতরাহ, লন্ডন, সৌদি, আবুধাবি, মাদ্রাসার জমি ও দোকান ঘর ভাড়া, সোনাগাজী পৌরসভাস্থলে ৪তলা বিশিষ্ট এতিমখানা ভবন এবং ঢাকার মোহাম্মদপুরে ৫তলা বিশিষ্ট বিছ্মিল্লাহ টাওয়ারের ভাড়া হলো প্রতিষ্ঠানের প্রধান আয়ের উৎস।
প্রতিষ্ঠানের মোহতামিম শায়খুল হাদীস আল্লামা নুরুল ইসলাম আদীব সাহেব বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম আল হোসাইনিয়া ওলামা বাজার মাদ্রাসা। আমাদের প্রতিষ্ঠান সবসময়ই শৃঙ্খলীত। ছাত্রদের আদব-কায়দা থেকে শুরু করে কুরআন-হাদীসের নির্দেশিত আদর্শ পথে চলার মত শিশু থেকে যোগ্য আলেম হিসেবে তৈরী করে দেশ মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত করার সঠিক পথে প্রদর্শিত করা সহ এতিম-অসহায় পরিবারের সন্তানদের বিনামূল্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে প্রতিষ্ঠান।