সোনাগাজীতে আমন ধান সংগ্রহে ধীরগতি, কৃষকদের ভোগান্তি চরমে

আপডেট : February, 14, 2020, 5:00 pm

জাবেদ হোসাইন মামুন->>>সোনাগাজী উপজেলা খাদ্য গুদামে ধারণ ক্ষমতা না থাকায় ও স্থান সংকটের কারণে সরকারিভাবে আমন ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে ধীর গতিতে। গত এক মাস যাবৎ এমনই ভোগান্তির মাধ্যমে সরকারি খাদ্য গুদামে নানা বিড়ম্বনার মধ্যে দিয়ে কৃষকেরা ধান বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন। গাড়ির উপর ও খাদ্য গুদামের আশেপাশে ধানের বস্তা রেখে লাইনে অপেক্ষমান থেকে গুণতে হচ্ছে লোকসান। সরকারি প্রণোদনা পেয়ে লাভবান হওয়ার পরিবর্তে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষকরা। ধানের দামে আর গাড়ি ভাড়ায় একাকার হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। গুদামের আশেপাশে খোলা আকাশের নীচে ধানের বস্তাগুলো স্তুপ করে রাখায় কারো কারো ধানের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ সড়কে বা গুদামের সামনে খোলা জায়গায় নানা কষ্টে ধানগুলো রোদে শুকাতে হচ্ছে। সরকারিভাবে ভূর্তকি দিয়ে আমন ধান সংগ্রহের খবরে ফেনীর সোনাগাজীতে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া যুগিয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনারও সৃষ্টি হয় কৃষকদের মাঝে। বাজার মূল্য থেকে অতিরিক্ত মূল্যে ধান বিক্রিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সোনাগাজীর সাধারণ কৃষকেরা। একজন কৃষক মাত্র দুই টন ধান বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা থাকায় একেকটি পরিবারে স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনদের নামেও কৃষি কার্ড বানিয়ে ধান বিক্রি করে যাচ্ছেন তারা। মোশাররফ হোসেন শেখ নামে একজন কৃষক জানান, তিনি জমি চাষ করেন প্রায় ১২ একর। ধান উৎপাদন করেছেন প্রায় ২০টন। তিনি কৃষক হিসেবে মাত্র দুই টন ধান বিক্রি করতে পারবেন। সেজন্য তিনি তার স্ত্রী, কন্যা ও ছেলের নামে কৃষি কার্ড করেছেন। তারপরও আরো কয়েকটন ধান অতিরিক্ত থেকে যাবে। কৃষক আবুল কাসেম ও আবু সুফিয়ান সহ ধান বিক্রিতে অপেক্ষমান থাকা বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত ১৫-২০জন কৃষক জানান, ধান বিক্রি করতে এসে চার দিন ধরে তারা গুদামের সামনে নির্ঘুম রাত অতিবাহিত করছেন। গাড়ির উপর বা গুদামের আশেপাশে ধান রেখে তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গাড়ির উপর ধান রেখে অপেক্ষায় থাকায় বহু কৃষককে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া। তাদের দাবি গাড়ি ভাড়ায় আর ধানের দামে একাকার হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ অতিরিক্ত লোকসানের সম্মুখিন হতে হচ্ছে। খাদ্য গুদামে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ধান সংগ্রহ করায় রিতিমত হিমসিম খাচ্ছে খাদ্যগুদামে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মো. জাহাঙ্গীর আলম কৃষকদের ভোগান্তি ও গুদামে স্থান সংকটের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ২০১৯ সালের ১১ডিসেম্বর থেকে ২ হাজার ৭শ’ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সোনাগাজী খাদ্য গুদামে আনুষ্ঠানিক ভাবে আমন ধান সংগ্রহ শুরু করা হয়। প্রথম দিকে কৃষকদের মাঝে তেমন একটা সাড়া না থাকলেও গত এক মাস যাবৎ ধান বিক্রিতে কৃষকেরা যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। লাইনে দাঁড়িয়ে নানা কষ্ট শিকার করে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ধান বিক্রি করে চলেছেন। সোনাগাজীর তিনটি খাদ্য গুদামে ধান রাখার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ১ হাজার ৭৫০টন। এর মাঝে গুদামে জমা পড়ে রয়েছে কাবিখার কয়েকশ টন চাউল। ধান ও চাউল একই গুদামে গাদাগাদি করে রাখায় পোকার আক্রমনের আশঙ্কাও করেছেন তিনি। ধানের মাঝে ভ্যাপসা গরমে চাউলের গুণগত মান নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা করেছেন তিনি। সোনাগাজীর কৃষকেরা যেমনি রাত দিন পরিশ্রম করে গুদামে ধান বিক্রি করছেন, তেমনি কৃষকদের কষ্ট দেখে গুদামের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রাত দিন পরিশ্রম করে ধান সংগ্রহ করছেন। সংগৃহিত ধান থেকে চাউল প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য ফেনী জেলার মাত্র দুইটি রাইচ মিলে ধানগুলো জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন কৃষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফেনীর মেসার্স জাহিদ অটো রাইচ মিল ও কসকা অটো রাইচ মিলে প্রতি সপ্তাহে মাত্র ৩৬ টন ধান থেকে চাউল প্রক্রিয়াজাত করা হয়। অথচ প্রতি সপ্তাহে সোনাগাজীতে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে দুই থেকে তিনশ টন। ফেনী বা আশপাশের জেলায় চাউল প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য যদি আরো কয়েকটি অটো রাইচ মিলে চাউল প্রক্রিয়াজাত করা যেত, তাহলে ভোগান্তি কেটে যেত। এছাড়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ ধান সংগ্রহ করা যেত।সোনাগাজীর কৃষকদের মাঝে ধান বিক্রিতে ব্যাপাক উৎসাহ থাকার পরও গুদামে স্থান সংকটের কারণে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা। গত ১১ডিসেম্বর থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সোনাগাজীতে ১ হাজার ৩৪০ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারিভাবে এই ধান সংগ্রহ অভিযান চলবে। এভাবে ধীর গতিতে ধান সংগ্রহ চলতে থাকলে বাকী সময়ে আরো প্রায় ১ হাজার ৪শ’ টন ধান সংগ্রহ করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। উপজেলা খাদ্য অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর একটি  সূত্র জানিয়েছে, স্থান সংকটের কারণে লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৭শ’ টন ধান সংগ্রহের পরিবর্তে ২ হাজার ৯ টন ধান সংগ্রহের গোপন সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা খাদ্য বিভাগের আমন ধান সংগ্রহ কমিটি। উপজেলা আমন ধান সংগ্রহ কমিটির সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেব সোনাগাজী খাদ্য গুদামে স্থান সংকটের কারণে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। উপজেলা আমন ধান সংগ্রহ কমিটির সদস্য সচিব, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. খুরশিদ আলমও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।