কে এই গরু আলাম? যেভাবে গড়ে তুলেছে ডাকাত বাহিনী | ১ম পর্ব

আপডেট : April, 27, 2020, 6:58 pm

বিশেষ প্রতিনিধি-

এলাকার চা দোকানের কর্মচারী থেকে ক্ষমতাসীন পার্টি আ’লীগের সাইনবোর্ড লাগিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার সময়টা খুব বেশিদিনের নয়। বলছিলাম ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার কুঠির হাটের ভূমিদস্যু গরু আলমের কথা। কমবেশি সকল শ্রেণী পেশার মানুষই জানে কে এই গরু-আলম! কি তার পরিচয়!

মজলিশপুর ইউনিয়নের চর গোপালগাঁওয়ের মোল্লাবাড়ির চেরু মিয়ার ছেলে গরু আলম। পেশায় চা দোকানের কর্মচারী। ৯০ দশকে একই ইউনিয়নের চর লক্ষীগঞ্জ মাদ্রাসা মোকাম বাজারের কালা মিয়ার চা দোকানের কর্মচারী এই আলম আজ নামে-বেনামে বহু সম্পত্তির সহ কোটি টাকার মালিক।

এলাকায় জানা যায়, ৯৬ তে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এলাকায় ছিঁচকে চুরি-ডাকাতির সাথে জড়িত থাকায় এলাকা ছাড়তে হয় তাকে, পরে ঢাকায় কোন একটি হোটেলে দীর্ঘদিন চাকরির পর বিদেশ পাড়ি দেয়। গত ওয়ান-ইলেভেনের আগ-পর মুহূর্তে দেশে এসে চুপচাপ থাকার কিছুদিন পর খায়েশ জাগে ইউপি মেম্বার হওয়ার। সেই লক্ষ্যে কৌশলে মিশ্তে থাকে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের সাথে, একেক জনকে একেক ভাবে রাজি-খুশি করে নিজের গায়ে লাগায় ক্ষমতাসীনদলের সাইনবোর্ডটিকে।

পূর্বের অভিজ্ঞতার ধরন চেঞ্জ করে শুরু করে বাহিনী গঠনের প্রক্রিয়া। ইউনিয়ন পরিষদ ও কুটির হাট বাজারে আধিপত্য বিস্তার করার লক্ষে ঐ ওয়ার্ড (ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং সদর) ওয়ার্ড কে টার্গেট করে শুরু করে মিশন, সালিশি বাণিজ্য আর থানা প্রশাসনের ধরপাকড়ের তদবির বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে পাকাপোক্ত করে নিজের অবস্থান। লোকাল ২/৪ জন ছিঁচকে চোর-ডাকাত কে টার্গেট করে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গঠন করে আলম বাহিনী। এদের সাথে যোগ দেয় তাদের আরো কিছু বন্ধুবান্ধব সহ এলাকার বেকার অবুঝ যুবক। এভাবে বাড়তে থাকে তাদের দল। পাড়ায়-মহল্লায় বিভিন্ন জায়গায় গ্রুপে গ্রুপে আছে তার বাহিনী । এদের শক্তি দিয়েই শুরু হয় পাড়ায়-মহল্লায় টেন্ডার আর চাঁদাবাজি।

বিগত কয়েক বছর ধরে তার নিয়ন্ত্রিত বিষ্ণুপুর মহল্লায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য মাদক বিক্রেতার গ্রুপ। পাশাপাশি জুয়ার আসরে নিত্য বসে ইয়াবা , মদসহ গাজার আসর, মাঝেমধ্যে নারীদের অর্ধউলঙ্গ জলসা। দেখলে মনে হয় এ যেন সিনেমার কোন শুটিং এর দৃশ্য। একাধিকবার জনসমক্ষে এমন জলসার আয়োজন করলে প্রশাসনের বাধায় তা করতে পারেনি।

এবার চলি মূল কথায়- গত এক বছরে ইউনিয়ন পরিষদ ও বাজার সংলগ্ন আবাসিক জোন, সদর ওয়ার্ডে গরু আলমের বাহিনী কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছে মা-মেয়েসহ প্রায় ৫ থেকে ৬ জন নারী। ডাকাতির শিকার হয়েছে অন্তত ১০ থেকে ১২টি ফ্যামিলি। দোকানপাট-বাড়িঘর সহ চুরি হয়েছে অসংখ্য।

এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানায়,বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু গজেন্দ্র ভূষণ রায়ের বাড়ি, – প্রবাসী সিরাজের বাড়ি, আবু তৈয়বের বাড়ি, সিরাজ মাস্টার বাড়িসহ ২টি ঘর, মতিন হুজুরের বাড়ি, সোহাগের বাড়ি, মাকুর বাড়ি সহ সর্বশেষ ষষ্ঠ শ্রেণীর মাদ্রাসার ছাত্রীর বাবা চা দোকানদার মিজানের বাসা। এই ঘটনাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ঘরে ডাকাতিসহ ধর্ষিত হয়েছে অন্তত ৫ থেকে ৬ জন নারী! এদের মধ্যে লাজ-লজ্জার ভয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে তিন থেকে চারটি পরিবার। “ছোট-না করার উদ্দেশ্যে পরিবার গুলোর নাম সংরক্ষণে রাখছি”

এই ঘটনাগুলোর মধ্যে দুইটির এজহার হয়েছে জানা যায়, বাকি সবগুলো ঘটনা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময় ও স্থানীয়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে হুমকি-ধমকি দেখিয়ে ধামাচাপা দিয়ে-দিয়েছে ডাকাত সর্দার গুরু আলম।

ঐ দুটিসহ বিভিন্ন মামলায় আটক হওয়া একাধিক জনকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছে এই গরু আলম। ডাকাতি ও ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগির স্বামী সিরাজ আলোকিত সময়কে বলেন, আমরা থানায় অভিযোগ করতে গেলে গরু আলম বাধা দিয়ে বলে, এতে নিজেদের সম্মান নষ্ট হবে, এলাকার মানুষ জানবে, বরং আমরা নিজেরাই এলাকাতে বসে মীমাংসা করে ফেলব বলে মামলা করতে দেয়নি। শুধু তাই নয় বিষ্ণুপুর স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক বাবু গজেন্দ্র ভূষণ রায় এর বাড়িতে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের এলাকাতে মীমাংসা করবে বলেও ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। এছাড়া আরো অসংখ্য ঘটনায় থানা থেকে অনেক কে ছাড়িয়ে আনার ঘটনা অহরহর।

শুধু তাই নয় ইতিপূর্বেও মেলার নামে চাঁদা তোলা, অবৈধ বালু উত্তোলন ও কালীবাড়িতে জুয়ার আসর থেকে ওসির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা আদায়ের মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হওয়া ঐ ডাকাত দলের সদস্যদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসে গরু আলাম। যেই তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলে, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ পরিবারের উপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। এই ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নন এলাকাবাসী। যার কারণে দিনের পর দিন তাদের সাহস বেড়ে চলছে। ঘটছে একের পর এক ডাকাতি ও ধর্ষণ।

জানা যায়, সর্বশেষ ঘটনায় যদিও গা-ঢাকা দিয়েছে গুরু আলম ! তবে বসে নেই তার কার্যক্রম। নিজেকে বাঁচাতে দলিয় সহ বিভিন্ন মহলে তদবির করে চলছে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে।

এমত অবস্থায় অবিলম্বে ডাকাত সর্দার গরু আলমকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন এলাকাবাসী । পাশাপাশি তাকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী।