শাহজাহান খানরা কোথায় ? আনিস আলমগীর

আপডেট : May, 10, 2020, 9:27 pm

অনলাইন ডেস্ক-

আব্বা বেঁচে থাকতে আমাদের পরিবহন ব্যবসা ছিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক। ছোট আকারে। কিন্তু পরে থাকলো না। উনি মারা যান ১৯৯৯ সালে সম্ভবত ২০০৪/৫-এর দিকে ব্যবসাটা পারিবারিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ বড় পুঁজি না হলে এই সেক্টরে টিকে থাকা কঠিন। তারওপর শুধু বাসের ড্রাইভার-কনট্রাকটর ভরসা করে পারবেন না। এখন যে শুনেন শ্রমিকরা কন্ট্রাকে গাড়ি চালায়- এটা তারই সাইড এফেক্ট। তারপর আছে ঘাটে ঘাটে চাঁদা, মালিক সমিতির চাঁদা, পুলিশের চাঁদা, রাস্তাঘাটে এক্সিডেন্টের ঝামেলাতো আছেই।

একবারতো ঈদের দিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইসমাইল কার্পেট মিলের সামনে ব্রিজের সঙ্গে ধাক্কায় এমন দূর্ঘটনা হল যে একটি বাস পুরাই ধ্বংস, ইঞ্জিনের কিছু লৌহা পাওয়া গিয়েছিল। আহত অনেক, মৃত্যের সংখ্যা ১০ জন। আব্বা কয়েক রাত ঘুমাতে পারেননি এই মৃত্যুর শোকে, গাড়ির শোকও ছিল। পুরো দোষ ছিল ড্রাইভারের, সে মরেনি পঙ্গু ছিল অনেক দিন। বিশ্বাস করেন এতোগুলো মৃত্যু দেখে আমি তার মৃত্যু কামনা করেছিলাম।

নর্মালি স্টাফদের সঙ্গে আমাদের এমন সম্পর্ক না। যুদ্ধের সময় আমাদের ঘরবাড়িতো পুড়েছিলই সদ্য কেনা একটি বাসও পুড়িয়েছে পাকিস্তানি সৈনিকরা। সেই গাড়ির ড্রাইভার স্নেহ করতো আমাদের, যুদ্ধের পরও আমাদের বাড়ি এসেছিল। নাম ভুলে গেছি। আরেকটা ড্রাইভার ছিল কালু। সেও সম্মান করতো, স্নেহ করতো। আমি যখন হাইস্কুলে, তখন আব্বা মোজাম্মেল নামের একজন কন্ট্রাকটরকে কোনো কারণে আর গাড়িতে উঠতে দেয়নি। আমার সঙ্গে তার খাতির ছিল। সে শহর থেকে আমার জন্য ভিউকার্ড কিনে উপহার দিন। সামনে তার বোনের বিয়ে ছিল, এমন সময় তার চাকরিচ্যুতিতে আমি এতো কষ্ট পেয়েছিলাম যে তার কাহিনী নিয়ে একটা গল্পও লিখেছিলাম (ছাপার যোগ্য হয়েছিল কিনা কে জানে!)।

এইসব কাহিনীর অবতারণা করছি বেশ ক’দিন ধরে পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে সংবাদ দেখে। আমার অনেক খারাপ লাগছে। করোনায় গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই প্রায় ৪৫ দিন ধরে তারা কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে রয়েছে। সরকারি ত্রাণসহায়তাও জোটেনা তাদের ভাগ্যে, তাদের চাঁদাখোর শ্রমিক নেতারা তাদের পাশে নেই। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে পরিবহন শ্রমিকদের ৯৯% ডেইলি লেবার হিসেবে কাজ করে। এমনকি ডেইলি লেবারও বলা যাবে না, এরা ট্রিপ ভিত্তিক পারিশ্রমিক পায়।

এই দুর্দিনে সরকারের ওদের পাশে দাঁড়ানো দরকার। আমি আশ্চর্য হই শাজাহান খান, শিমুল বিশ্বাসসহ যে সমস্ত বড় বড় শ্রমিক নেতারা দিনের পর দিন ওদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছেন তারা এই মুহূর্তে শ্রমিকদের নিয়ে সরব নয় কেন! পরিবহন শ্রমিকদের চাঁদাগুলো কোথায় গেল সরকারি কোনো সংস্থার কর্তারা কি তার হিসাব নেবেন?