সোনাগাজীতে ১৪৪ধারা জারি করেও থামানো যাচ্ছেনা ভূমি দস্যুদের তান্ডব!

আপডেট : November, 18, 2020, 7:04 pm

স্টাফ রিপোর্টার->>>
ফেনীর সোনাগাজীতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ধারা জারি করেও ভূমি দস্যুদের তান্ডবলীলা থামানো যাচ্ছেনা। শনিবার ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে জামশেদ আলম ও মিস্টার নামের দুই ব্যক্তির মালিকীয় দুটি স্কেভটরে অগ্নি সংযোগ করে বিকল করে দিয়েছে। এছাড়াও আরো বেশকয়েকটি স্কেভেটর মালিককে তিন দিনের মধ্যে স্কেভেটরগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে আল্টিমেটাম দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। স্কেভেটর প্রবেশ না করাতে আনসার দিয়ে পাহারাও বসানো হয়েছে। শনিবার বিকাল তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ইউএনও অজিত দেব ও সহাকারি কমিশার (ভূমি) তাসলিমা শিরিনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানো হয়। মোহাম্মদ হানিফ নামে এক ব্যক্তি জানান, কোটি কোটি টাকার মিশন নিয়ে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানা জমি জবর দখলে নিতে সংঘবদ্ধ একটি ভূমি দস্যু চক্র যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এক দিকে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক অন্য দিকে ভূমি দস্যুদের আতঙ্কে দিন কাটছে সোনাগাজীর ভূমি মালিক ও ভূমি কর্মকর্তাদের। ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, মামলা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, যন্ত্রপাতি জব্দ সহ সর্বোপুরি ১৪৪ধারা জারি করেও বন্ধ করা যাচ্ছেনা ভূমি দস্যুদের তান্ডব লীলা। উপজেলার চরখোয়াজের লামছি, থাক খোয়াজের লামছি ও মুহুরী নদীর তীরে জেগে ওঠা কলমির চরে চলছে ভূমি দস্যুদের জমি জবর দখলের মহোৎসব। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি রজস্যজনক কারণে প্রকৃত ভূমি দস্যু ও জবর দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিতে পারায় ভূমি দস্যু চক্রটি দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ফেনীর সোনাগাজী ও মীরসরাই উপজেলার একটি শক্তিশালী ভূমি দস্যু সিন্ডিকেট এই জবর দখলে মত্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। করোনা ভাইরাসের মহামারিতে লক ডাউনের সুযোগে স্কেভেটর দিয়ে তিনটি মৌজায় দিনে রাতে পালা করে হাজার হাজার একর জমির শ্রেনির পরিবর্তন করে মাটি বিক্রি ও পুকুর খনন করে দখল করে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানো হয়েছে। প্রকৃত ভূমি দস্যুদের গ্রেফতার বা আইনের আওতায় আনতে না পারলেও কয়েক জন শ্রমিক কে পৃথক অভিযানে আটক করে কারাদন্ড ও জরিমানা করা হয়েছে। স্কেভটর ও ড্রেজার মেশিন জব্দ করা হয়েছে। একটি স্কেভেটরে অগ্নিসংযোগ, একাধিক স্কেভেটর ভাঙচুর ও বিকল করে দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। উপায়ন্ত না দেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেব ঘটনাস্থলে গিয়ে লাল পতাকা দিয়ে ১৪৪ধারা জারি করেন। কিন্তু চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। পালা করে রাতের আঁধারে মাটি বিক্রি ও পুকুর খনন করে বেপরোয়া জবর দখল চালাচ্ছে তারা। ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকা অবস্থায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সেই ভূমি দস্যুরা জবর দখলকৃত পুকুরে মাছের পোনা বা মাছ ছেড়ে মাছও চাষ শুরু করেছে।
১৪৪ ধারা বলবৎ থাকা অবস্থায় জবর দখলকৃত পুকুরে মাছের পোনা বা মাছ ছেড়ে চাষ করায় জনমনে নানা প্রশ্ন আর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। ভূমি দস্যুদের ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেনা সাধারণ মানুষ। ভূমি দস্যু চক্রটির কাছে যেন ভূমি কর্মকর্তরাও অসহায় হয়ে পড়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য অধিগ্রহনের জন্য প্রস্তাবিত থাক খোয়াজের লামছি, চরখোন্দকার ও চরখোয়াজের লামছি মৌজার হাজার হাজার একর সরকারি ও নিরিহ কৃষকদের জমির শ্রেনি পরিবর্তন করে মাটি বিক্রি ও পুকুর খনন করে জমি জবর দখল অব্যাহত রেখেছে ভূমি দস্যু চক্রটি। ভূমি দস্যদের বেপরোয়া দখলে যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছে খোদ উপজেলা প্রশাসন ও নিরিহ কৃষকরা। কিছুতেই রক্ষা করা যাচ্ছেনা সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানার জমি। এসব ভূমি দস্যুতায় নাম উঠে এসেছে মীরসরাই উপজেলার মামুন মেম্বার, মো. শাহ আলম, মিজানুর রহমান, মোস্তফা, মীর মামুন, নিজাম জমিদার, জসিম উদ্দিন বোল্টা, মাছ কাদের, ইকবাল হোসেন, হুদন, নূরনবী মিস্টার, মঞ্জুরুল হক, নাছির উদ্দিন, ফজলু, হুমায়ূন কবির, আলা উদ্দিন ও সেলিম সহ আরো অনেকে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেব বলেন, ভূমি দস্যু সিন্ডিকেটের তান্ডব থামাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানের আগেই ঘটনার মূলহোতারা প্রতিবারই পালিয়ে যায়। তাদের কাউকেই পাওয়া যায়না। তবে কয়েক জন শ্রমিককে পৃথক অভিযানে আটক করে কারাদন্ড ও জরিমানা করা হয়েছিল। এছাড়া মাটি কাটার যন্ত্রপাতিও জব্দ করা হয়েছে। অভিযানে একাধিক স্কেভেটরে অগ্নিসংযোগ, একাধিক স্কেভেটর ভাংচুর ও বিকল করে দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। এরপরও তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে না পেরে বেশ কয়েকবার ওইসব এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। কিন্তু এরপর দিনের বদলে রাতের আঁধারে শুরু হয় তাদের কার্যক্রম। ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কৃষি জমি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্প জোনের নামে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমি রক্ষায় ওই এলাকায় স্কেভেটর প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে শনিবার থেকে পানি উন্নয়নবোর্ডের আনসারদের দিয়ে পাহারা বসানো হয়েছে।
সোনাগাজীর সহাকারি কমিশনার (ভূমি) তাসলিমা শিরিন মুক্তা বলেন, কৃষি ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমি রক্ষায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।