

বিশেষ প্রতিনিধি-
দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের গজারিয়া শাহ সুফী ছদর উদ্দিন আহমদ (রহ.) ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায় গ্রন্থাগারিক, আয়া ও নৈশপ্রহরী নিয়োগে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
প্রার্থীর কাছে টাকা দাবী সহ কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফেরতও দেয়া হয়েছে বলে জানাযায়। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সুপারের যোগসাজশে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজপ্রতিষ্ঠান’কে আড়াল করে অন্যত্র ‘লোকদেখানো’ নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার কোরাইশমুন্সী সিনিয়র মাদরাসায় তিনটি পদে নিয়োগ পরীক্ষা হয়। গ্রন্থাগারিক পদে ২৫ জন, আয়া পদে ৪ জন ও নৈশপ্রহরী পদে ৭ জন প্রার্থী ছিলেন। নিয়োগ
পরীক্ষায় গ্রন্থাগারিক পদে ৫, আয়া পদে ৩ ও নৈশপ্রহরী পদে ৫ জন অংশ নেন। এদের মধ্যে গ্রন্থাগারিক পদে ছানাউল্যাহ, আয়া পদে আকলিমা আক্তার, নৈশপ্রহরী পদে শাহপরানকে চূড়ান্ত করা হয়। নিয়োগ বোর্ডের ৫ সদস্যের মধ্যে গভর্নিং বডির সদস্য জয়নাল আবদীন অনুপস্থিত ছিলেন। অন্য সদস্যরা হলেন মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সিরাজ উদ্দৌলা, সুপার মুহাম্মদ নুরুল আমিন, ঢাকা আলীয়া মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক শাহজালাল ও মাদরাসা পরিচালনা.পর্ষদ সদস্য সফিকুর রহমান কোম্পানী।
অভিযোগ উঠেছে, আগে থেকেই ছানাউল্যাহ, আকলিমা ও শাহপরানকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে দফারফা হয়েছে। ২ মিনিটে মৌখিক পরীক্ষা শেষ করা হয়। মৌখিক পরীক্ষা না নিয়েও কাগজে-কলমে তা দেখানো হয়। পুরো প্রক্রিয়া ২ থেকে ৫ লাখ টাকায় ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সভাপতি সিরাজউদ্দৌলা ও সুপার নুরুল আমিন।
নৈশপ্রহরী পদের প্রার্থী ওমর ফারুক সাংবাদিকদের জানান, তাকে নিয়োগ দিতে মাদরাসার সভাপতি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবী করেছিল। নিয়োগ পরীক্ষার আগেরদিন ৪ জানুয়ারি সোমবার মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য নুরুল করিমের মাধ্যমে।দুইদফায় ৫০ হাজার টাকা জমা দিই। পরে অন্য লোককে নিয়োগ দিয়ে টাকা ফেরত দেয়। নিয়োগ পরীক্ষার সময় কোরাইশমুন্সী মাদরাসার কেরানী বাবুল এক প্রার্থীর উত্তরপত্রে লিখতে সহযোগিতা করেন।
নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়া অপর প্রার্থী মোহাম্মদ রায়হান জানান, তার দাদা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে তারই অগ্রাধিকার। অথচ এক প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে পরীক্ষার সময় কেরানী বাবুলের মাধ্যমে উত্তরপত্র লিখতে সহযোগিতা করা হয়।
মীর হোসেন নামের এক প্রার্থী জানান, পরীক্ষার সময় এক প্রার্থীকে লিখে দেয়া হয়। পরে শুনি তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষার সময়ও অল্পসময়ে বের করে দেয়া হয়েছে।
ওমর ফারুক জানান, তাকে নিয়োগ দিতে মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদ সদস্য নুরুল করিম ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। নিয়োগ দিতে না পেরে পরে সেই টাকা ফেরতও দিয়েছেন।
আয়া পদের প্রার্থী দেলআফরোজ জানান, তার স্বামী নুর হোসেন মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য। তার কাছেই মাদরাসার সভাপতি ও সুপার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবী করেছে। মাদরাসার এক সদস্য নুর করিম ৩০ হাজার টাকা চেয়েছেন। স্বামী অসুস্থ থাকায় টাকা দিতে না পারায় তার চাকরী হয়নি।
মাদরাসার সুপার মুহাম্মদ নুরুল আমিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ফোন না ধরায় মাদরাসার সভাপতি সিরাজউদ্দৌলার বক্তব্য জানা যায়নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজুল হক জানান, বিধিবহির্ভূতভাবে।অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ায় সেটি স্থগিত রাখতে সুপারকে মোবাইল ফোনে নির্দেশনা দেয়া হয়।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিম উল্যাহ জানান, এ ধরনের অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে তিনদিনের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন জমা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।