সোনাগাজীতে অভিনব কায়দায় ঔষধ চুরির অভিযোগে এক দোকান মালিক ও কর্মচারীর ১২ লাখ টাকা জরিমানা

আপডেট : June, 26, 2021, 12:47 am

স্টাফ রিপোর্টার->>>
ফেনীর সোনাগাজীতে এক ফার্মেসী কর্মচারীর সাথে যোগসাজশে অন্য ফার্মেসী মালিক গোপনে অভিনব কায়দায় ঔষধ চুরির দায়ে ১২লাখ টাকা জরমিনানা করেছে বণিক সমিতি। সোনাগাজী থানার সামনে নয়ন মেডিক্যাল হলের মালিক নয়ন শর্মার ৮লাখ ও সোনালী ফার্মেসীর কর্মচারী পিয়াস শর্মার ৪লাখ টাকা চরিমানা করা হয়েছে। নয়ন শর্মা সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের পূর্বসুজাপুর গ্রামের নাপিত বাড়ির জহর লাল শীলের ছেলে এবং পিয়াস শর্মা একই বাড়ির তপন কুমার শীলের ছেলে। বুধবার রাতে সোনালী ফার্মেসীর অফিস কক্ষে সোনাগাজী বাজার কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি ও সোনাগাজী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ডা.নূরনবীর সভাপতিত্বে এক সালিশি বৈঠকে এই জরিমানা করা হয়। সলিশি বৈঠকে সোনাগাজী পৌর যুবলীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন অপু, বণিক সমিতির নেতা আবুল কাসেম, শহীদ উল্যাহ, মোসলেহ উদ্দিন, ইনামুল হক, সোনালী ফার্মেসীর মালিক সাইফুল ইসলাম বিপ্লব, অভিযুক্তদের পিতা জহর লাল শীল, তপন কুমার শীল এবং কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতৃবৃন্দ জানায়,
পিয়াস শর্মা দীর্ঘ ৬ বছর যাবৎ সোনাগাজী বাজারের পাইকারী ঔষধ দোকান সোনালী ফার্মেসীতে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে আসছে। বিশ্বস্ত কর্মচারী হিসেবে তাকে দিয়ে বিভিন্ন ফার্মেসীতে ঔষধ দেয়া হত। স্লিপ অনুযায়ী প্যাকেজিং করত পিয়াস শর্মা।বিশ্বস্ততার সুযোগে পিয়াস ঔষধের কার্টনে অতিরিক্ত ঔষধ প্যাকেজিং করে অভিনব কায়দায় চুরিকৃত ঔষধ তার বাড়ির নয়ন শর্মার নিকট অর্ধেক দামে বিক্রি করত। তারা পরস্পর যোগসাজসে বিগত চারমাসে সোনালী ফার্মেসীর প্রায় ২০লাখ টাকার ঔষধ চুরি করে বিক্রি করেছে। বিষয়টি সন্দেহ হলে গত ১৭জুন ভৈরব চৌধুরী বাজারের জনৈক হাসান ও নবী নামে দুই ঔষধ দোকানীর জন্য দুই হাজার পাঁচশ’ টাকা মূল্যের দুটি প্যাকেজিং করা ঔষধের কার্টন খুলে দেখতে পান ওই কার্টনেগুলোতে ২৮হাজার টাকা মূল্যের ঔষধ প্যাকেজিং করা হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে পিয়াস শর্মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে নয়নের সাথে গোপন সম্পর্কের মাধ্যমে অভিনব কায়দায় দীর্ঘ দিন ঔষধ বিক্রির কথা স্বীকার করেন। পরবর্তীতে গত ২৩জুন বুধবার রাতে সালিশি বৈঠকে নয়ন মেডিক্যালের মালিক নয়ন শর্মা ও পিয়াস শর্মাকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা প্রায় ১২লাখ টাকার ঔষধ বিক্রির কথা স্বেচ্ছায় স্বীকার করেন। সোনালী ফার্মেসীর মালিক সাইফুল ইসলাম বিপ্লব গত কয়েক মাসে তাঁর প্রায় ২০লাখ টাকার ঔষধ চুরির দাবি করেন। সালিশদারগণ উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে সোনালী ফার্মেসীর কর্মচারী পিয়াস শর্মার চার লাখ টাকা এবং নয়ন মেডিক্যালের মালিক নয়ন শর্মার আট লাখ টাকা জরিমানা করেন। পিয়াসের পিতা তপন শীল বলেন, তার ছেলে দুইবার ওই ফার্মেসী থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু ছেলে এক প্রকারে জিন্মি করে জহরলাল ও তার ছেলে নয়ন শর্মা সেই ফার্মেসীতে চাকরি ও ঔষধ চুরি করতে বাধ্য করেছে। অল্প বয়সের ছেলে প্রথমে ভুল করে থাকতে পারে, কিন্তু জহর লাল ও তার ছেলে নয়ন সবসময় ভয় দেখিয়ে আমার সহজ সরল ছেলেকে বিপথে পরিচালিত করেছে। ঘটনার পর যেখানে সোনালী ফার্মেসীর লোক আমার ছেলেকে মারার কথা, সেখানে তারা আমার ছেলেকে কিছু না করে বণিক ও কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কাছে বিচার চেয়েছেন। অথচ জহরলাল ও তার ছেলে নয়নের অপকর্ম ডাকতে ছেলে কেন তাদের কথা মুখোমুখী স্বীকার করেছে এই অপরাধে আমার ছেলেকে বুকে ঘুসি মেরেছে জহর লাল। এ দিকে জহর লাল শীল পুরো ঘটনা এডিয়ে গিয়ে বলেন, তার ছেলের কোন জরিমানা হয়নি। সোনালী ফার্মেসীর কর্মচারী পিয়াসের সাথে ঔষধ সংক্রান্ত ভুলবুঝাবুঝির কারণে যে বিরোধ হয়েছে আমি সহ থেকে মীমাংসা করে দিয়েছি। এ ব্যপারে তিনি আর কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে রাজি হননি। সোনাগাজী বাজার বণিক সমিতি ও কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি ডা.নূরনবী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
সোনালী ফার্মেসীর মালিক, কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিপ্লব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত কয়েক মাসের হিসেবে দোকান থেকে চুরি হয়েছে প্রায় ২০লক্ষাধিক টাকার ঔষধ। এর পূর্বেও বহু টাকার ঔষধ চুরি হয়েছে। কর্মচারীদের সাথে অন্য দোকানীদের যোগসূত্র রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পৌর যুবলীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন অপু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সোনালী ফার্মেসীর মালিক আমার ভাড়াটিয়া। বিষয়টি নিয়ে বিচার চলাকালে ঘটনাস্থলে জানতে পারি ঔষধ চুরির বিষয়টি স্বীকার করে পিয়াস ও নয়ন ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে রাজি হন। মালিক সাইফুল ইসলামের দাবি ছিল ২০লাখে অধিক। অভিযুক্তরা স্বেচ্ছায় ১২লাখ টাকা দিতে রাজি হন। মালিককে উপস্থিত সালিশদারগণ বুঝিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন।