উঠি যও,

আপডেট : June, 2, 2019, 3:23 pm

জাবেদ-মামুন-
বাবাকে চিরতরে হারানোর পর ৪র্থ রাতে বাবা প্রতিদিনের মত সাহরির সময় এসে বলল উঠি যও। জাগ্রত হয়ে বাবাকে আর দেখি নাই।
বাবার বড় ছেলে সৌদি আরবে অসুস্থতার খবর শুনে বাবা বাড়ির সামনের মসজিদে ছেলের সুস্থতা কামনা করে মিলাদ পড়িয়েছেন। বাবা কিন্তু তখন অসুস্থ। তারপরও নিজের সুস্থতার জন্য মিলাদ বাবা পড়াননি। সন্তানদের কত ভালবাসতেন তারই একটি নমুনা।
আমি যখন প্রতি বছর একবার জ্বরে আক্রান্ত হতাম বাবা দৌড়ে গিয়ে বাজারে গিয়ে গ্রাম ডাক্তার থেকে ঔষধ এনে খাওয়াতেন। পাওয়ারুটি, কলা বা জুস এনে খাওয়াতেন। পরম যত্নে কপালে হাত দিয়ে থার্মোমিটার ছাড়া বাবা আমার জ্বর পরিমাপ করে পরিবাবের সদস্যদের বলতেন। মামুনের জ্বর অতিরিক্ত বেড়ে গেছে মাথায় পানি দাও।
বাবার সেই সব স্মৃতি কিভাবে ভুলি? হে আল্লাহ, শোক সহিবার শক্তি দাও। বাবাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করে দাও।
বাবা ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে পাশের জমি থেকে কাঁচা মরিচ তুলে মসজিদের ইমাম সাহেবের হাতে দিয়ে বলেছেন প্রতিদিন ইফতারের সময় কাঁচা মরিচ প্রয়োজন হলে যেন ক্ষেত থেকে তোলা হয়। মসজিদের মাসিক চাঁদা মাস শুরুর পূর্বেই দিয়ে দিতেন বাবা। ৪র্থ রমজানে বাবা এলাকার তিনটি মসজিদের তারাবির চাঁদা পরিশোধ করে দিয়েছেন। এসব কিছু যেন বাবার কাছে বোঝা বা কর্জ্জ মনে হতো। আগেই বলেছিলাম বাবা কোন দোকানে বাকীতে লেনদেন করতেননা। বাবার সততাই ছিল সর্বোচ্চ শক্তি। পারিবারিক জীবনেও একজন আদর্শ পিতা হিসেবে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
সহজ, সরল ও নিরিহ বাবা আজ অন্ধকার কবরে কোটি কোটি মণ মাটির বোঝা বুকে নিয়ে চির নিন্দ্রায় শুয়ে আছেন।
যতই আহাজারি আর চিৎকার দেই নাই কেন, বাবাতোকোন উত্তর দেন নাই। তিনি তার স্থায়ী বাড়িতে বসবাস শুরু করে দিয়েছেন।
ইয়া আল্লাহ, বাবার ফুলসিরাত বিজলীর ন্যায় পার করে দাও। বাবাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করে দাও।
বাবার পরিপাটি চলা আর সুঠাম দেহ আজও আমাকে কাঁদায়। আবেগ থেকে নয়, হৃদয় থেকে বলছি।
বাবা তোমাকে শ্রদ্ধার সাথে ভালবাসি। সাহরির সময় যখন বাবাকে ডাকতাম, বাবা, ও বাবা, তখন বাবা জবাব দিতেন ও, উঠে গেছি। বাবার প্রয়োজনে বলতেন মামুন, ও মামুন। জ্বী বাবা বললে বাবা যেন আনন্দে আত্মহারা থাকতেন।
বাবাকে হারিয়ে বাবার সাজানো শোকাতুর পরিবারটি আজ নিঃসহ। বাবা নেই তাতে কি, বাবার ভালবাসা কিন্তু ঠিকই আছে।