চোরের আক্রোশে ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকের ফেসবুক স্ট্যটাস ভাইরাল

আপডেট : December, 24, 2019, 1:52 am

চোর বা চোরদের আক্রোশে ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিক জাবেদ হোসাইন মামুনের ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসের হুবহু তুলে ধরা হলো। একজন পেশাদার সাংবাদিক একজন সমাজকর্মীও বটে। যিনি অন্ধকারে জাতিকে আলোর পথ দেখান। আধুনিক সমাজ বিনির্মাণে তথা নির্যাতিতদের কন্ঠস্বর একজন সাংবাদিক সবমানুষের, সব মতের প্রিয় হতে না পারলেও সে তার নিজস্বগতিতে ছুটে চলেন নিরন্তর।

প্রিয় সোনাগাজী বাসী ক্ষমা করে দিও……চোর ডাকাতদের কাছে যেন হেরে না যাই……

জাবেদ হোসাইন মামুন->>>> ফেনী জেলার সর্ববৃহৎ সোনাগাজী উপজেলা একটি উপকূলীয় উপজেলা হিসেবে নানা কারণে বিশ্বের কাছে পরিচিত একটি জনপদ। এই জনপদেই আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা। দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবেসে প্রিয় বাবা মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন ও ভারতের বগাপাড়ায় বিশেষ প্রশিক্ষণ নিলেও মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেননি। এক সময় তার বক্তব্য ছিল দেশকে ভালবেসে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর শোষণের হাত থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন। সনদের জন্য নয়। দেশপ্রমিক নাগরিক হিসেবে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের দায়ীত্ববোধ থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। সুতরাং মুক্তিযোদ্ধা সনদের প্রতি গুরুত্ব দেননি। পরবর্তীতে অবশ্যই রনাঙ্গনের সাথীদের বিশেষ অনুরোধে নিতে চেয়েছিলন। যুদ্ধকালীণ সময়ে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ও জেনারেল নেয়াজি প্রদত্ত সনদগুলো হারিয়ে ফেলায় আর আবেদন করা হয়নি। যাক একজন দেশপ্রেমিক গর্বিত পিতার সন্তান হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। বাবার সততা আর দেশপ্রেমের কাছে আমি হেরে যাওয়াটা স্বাভাবিক। সোনাগাজীর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, রাজনৈতিক সহবস্থান নিশ্চিত, শিক্ষার মানোন্নয়ন সহ আধুনিক সোনাগাজী তথা ফেনী গড়ার মানসে ক্ষুদ্র প্রয়াসে অনেক লেখালেখি করেছি। তেমনি ভাবে মাদক, সন্ত্রাস, চোর-ডাকাত, জলদস্যু, ভূমিদস্যু, খুনি, ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে লেখতে গিয়ে কখনো কখনো কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সত্য লেখতে গিয়ে নানা অপবাদও মাথাপেতে সহ্য করতে হয়েছে। যে যুদ্ধে এখনো আছি। তারপরও মানবতার কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত কর্মী ভেবে মানুষের কাতারে মিলিত ছিলাম বা আছি। সাধারন মানুষের ভালবাসা এবং দোয়াই আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়।

৪মে ২০১৯ দিবাগত রাত ২টা-৪টার মধ্যে আমার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায় আমার মত কোন না কোন মানুষ। এখনো উদ্ধার হয়নি, কিন্তু নতুন একটা ক্রয় করেছি। মহান আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া।
২৫ দিনের মাথায় একজন চিকিৎসকের ভুলচিকিৎসায় ২৯ মে ২০১৯ বেলা ১১টার দিকে প্রিয় বাবাকে চির দিনের জন্য হারাই। বাবার কথা মনে পড়লে বেদনার নীল রঙে যেন হৃদয়টা খান খান হয়ে যায়। প্রিয় বাবা সহ পৃথিবীর সকল কবরবাসী মুসলামান নরনারীর জন্য মহান রবের কাছে বেহেস্তের সুমহান মর্যদার জন্য দোয়া করছি।

এরপর অক্টোবরের এক দিন ফেনীর পুরাতন সিভিল সার্জন মসজিদে আছরের নামাজ আদায় কালে জুতা চোরের দল আমার সহ এক সাথে ৪ জন মুসল্লির ৪জোড়া জুতা চুরি করে নিয়ে যায়। সে দিন বুঝতে পারলাম জুতা চোরও মুসল্লি সাজে। ওই মসজিদে প্রতিদিনই জুতা চুরির ঘটনা ঘটে চলছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে জুতা চোর ধরা পড়ছেনা!

২২ ডিসেম্বর ২০১৯ সকাল ১০টা থেকে সোনাগাজী হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা শুরু হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন সাংসদ লে.জেনারেল.অব. মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। সেখানে সোনাগাজী হাসপাতালের নানা সমস্যা সংকট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। সব সমস্যার মধ্যে একজন সিনিয়র ডাক্তার ও দুইজন সিনিয়র নার্স ঘুরেফিরে নবাগত চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জোর দাবি তুললেন। নবাগত ডাক্তারেরাও যেন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। তাদের মাঝেও আতঙ্কের চাপ। তাদেরকে যেন এমনভাবে ভয় দেখানো হয়েছে তারা আফ্রিকার কোন জঙ্গলে চলে এসেছে। তাদেরকে শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। এমনটাই পরিবেশ যেন বিরাজ করছে। অতীতের কয়েক বছর থেকে শুনে আসছি সোনাগাজী হাসপাতালে নতুন ডাক্তার এলে থাকেননা। নিজেরা বদলি হয়ে চলে যান। কেন চলে যান? তার উত্তর মিলেনা। এর মাঝে আরো উল্লেখ করতে হয় ওরা ৩/৪জন কিন্তু যুগের পর যুগ থাকলেও যাবেননা। আবার বদলির আদেশ এলেও কাটিয়ে ঘুরে ফিরে এখানেই থাকবেন। নতুন যারা আসবেন তাদের জন্য কিন্তু আতঙ্কের জনপদ যেন সোনাগাজী!

এক পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূরুল আলম বলেই ফেলেছেন সোনাগাজীর মানুষ নাকি রোগির মৃত্যু মেনে নিতে চায়না। এছাড়া উত্তেজিত জনতার হাতে নাকি তিনি ৩/৪বার হামলার শিকার হয়েছেন। অবশ্যই তার বক্তব্যের জবাব সিভিল সার্জন নিয়াতুজ্জামান খুব সুন্দর ও সাবলিল ভাষায় দিয়েছেন। যাতে উপস্থিত সবাই খুশি ছিলেন। আমি বলে রাখি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত সোনাগাজীর ইতিহাস ঐতিহ্য কিন্তু বিশ্বময় সমাদৃত। এই জন্য এই উপজেলায় জন্মগ্রহন করতে পেরেও নিজেকে গর্বিত মনে করে। সকল আন্দোলন সংগ্রামে যেমনি এই উপজেলার কৃতি সন্তানদের অবিস্মরণীয় অবদান রয়েছে, তেমনি দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রেও এই উপজেলার কৃতি সন্তানদের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।

নবাগত ডাক্তারদের কে যেন সোনাগাজী থেকে তাড়াতেই ভয় ঢুকিয়ে নিরাপত্তার বিষয়কে বারবার সামনে আনা হচ্ছে। তখন সোনাগাজীর চিকিৎসা বঞ্চিত অবহেলিত লোকদের কথা ভেবে নতুন চিকিৎসকদের শক্তি ও সাহস যোগাতে আমি এবং সোনাগাজী প্রেসক্লাবের সভাপতি শেখ আবদুল হান্নান ওই সভায় জোরালো প্রতিবাদ করি। আমাদের জোরালে প্রতিবাদে সাংসদ মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, উপস্থিত নেতৃবৃন্দ, ওসি মঈন উদ্দিন, সিভিল সার্জন নিয়াতুজ্জামান সহ উপস্থিত প্রায় সবাই একাত্মতা পোষণ করেন। তাৎক্ষণিক নবাগত হতাশাগ্রস্ত চিকিৎসকেরা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছেন।

সবাইকে ফুল দিয়ে হাসিমুখে বরণ করে নেন সাংসদ মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। সবাই উৎফুল্ল হাসি মুখে বিদায়ের পালা। বের হচ্ছি। হাসপাতাল সম্মুখে অপেক্ষমান শাহাপুরের এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি এক খন্ড জমি, একটি ঘর সহ সাহায্যের জন্য সাংসদের সামনে এসে দাঁড়ায়। তিনি তাৎক্ষণিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধির আবেদনে সুপারিশও করে দেন। এই সময়ের মধ্যে কিছু চোর বা চোরের দল আমার সাথে থাকা ব্যাগ থেকে আমার ব্যবহৃত মুঠো ফোনটি স্যামসাং ডোজ সিম নং -০১৮১৮৩৪৭৫২১ চুরি করে নিয়ে যায়। যে ফোনে আমার তিন হাজার সাতশ’টি গুরুত্বপূর্ণ নাম্বার সেভ করা ছিল। যে গর্বিত সন্তানদের জন্য প্রতিবাদ করেছিলাম। সোনাগাজীর মানুষদের ভালো বলেছিলাম। নবাগত চিকিৎসকদের নিরাপত্তার অভয় দিয়েছিলাম। সেই গর্বিত সন্তানরা আমার মোবাইলটি চুরির মাধ্যমে প্রমাণ করে দিল আমাদের জোরালো প্রতিবাদটি ভুল ছিল। সোনাগাজীর মানুষগুলো চোর। আর আমরা যারা প্রতিবাদ করে নবাগত চিকিৎসকদের শান্তির অভয় দিয়েছিলাম তার মিথ্যুক!

পুরাতন চিকিৎসক ও নার্সদের দাবি প্রতিনিয়ত হাসপাতালে চিককিৎসক, রোগি ও তাদের স্বজনদের গয়না এবং নগদ টাকা চুরি হয়ে আসছে। হাসপাতালে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েও কোন ফল আসছেনা। এর আগে দুই একটি চুরি হওয়া মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছিল। মোবাইলটি আমার অনুজ প্রবাসী ওমর ফারুক রুবেলের দেয়া। সুতারাং আমারটিও উদ্ধারের আশায় থাকলাম। মোটরসাইকেলটিরও হাল ছাড়িনি। তাও অনুজ ওমর ফারুক রুবেলের কেনা ছিল। জুতার হাল ছেড়ে দিয়েছি। গত ৩/৪ মাস পূর্বে এক জনকে বিকাশে টাকা গিয়ে ভুলে পুরান ঢাকার একজন কলেজ ছাত্রের নাম্বারে এক হাজার টাকা পাঠিয়ে দেই। টাকাগুলো ঢুকার পরপরই নাম্বারটি সে বন্ধ করে দেয়। এরপর প্রায় এক মাস পর কৌতুহল বশত ওই নাম্বারে ফোন করে বিনয়ের সাথে তাকে টাকাগুলো ফেরৎ পাঠাতে বলি। সে রিতিমত আমাকে অবাক করে টাকাগুলো ফেরৎ পাঠিয়ে দেন। তার সাথে পরিচয় হতে বা তাকে পুরস্কৃত করতে পুরান ঢাকা যেতে চেয়েছিলাম। তার জন্য প্রাণভরে দোয়াও করেছি। পৃথিবীতে ভালোমানুষগুলো আছে বলেই আজও সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখি। পুরান ঢাকার অচেনা কলেজ ছাত্রের সততার কাছে জয়লাভ করলেও হেরে গেলাম প্রিয় সোনাগাজীর চোর ডাকাতদের কাছে।

ক্ষমা করো সোনাগাজীবাসী। এরপরও ১৪জন সুহৃদ আমার জন্য নিজ উদ্যোগে একটি করে মোবাইল পাঠাতে চেয়েছিল। যাদের ভালোবাসায় বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পাই। তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ রইলাম।